বাজার সিন্ডিকেট-কারসাজি থামাতেই হবে

ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার জন্য বহুল অভিযুক্ত 'সিন্ডিকেট' নিয়ন্ত্রণে সরকার বিলম্বে হলেও যে উদ্যোগী হয়েছে, সংসদে এই সংক্রান্ত বিল পাসে তার সাক্ষ্য মেলে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে 'মজুদদারি ও মুনাফাখোরী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে' বলে প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে গত সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যাহীন নির্লিপ্ততাই দেখা গেছে।


ক্ষেত্রবিশেষে অপরের ওপর দোষারোপের সেই পুরনো ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। তাতে করে কখনও কখনও পরিস্থিতির বরং অবনতি হয়েছে। ফলে সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এসে যখন 'প্রতিযোগিতা বিল, ২০১২' সবুজ সংকেত পেল, তখন সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানানোই সঙ্গত। স্বাগত এই কারণে যে এর মধ্য দিয়ে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা বেড়ে গেল। বেড়ে গেল ক্রেতাসাধারণের ন্যায্যমূল্যে বাজারপ্রাপ্তির অধিকারের নিশ্চয়তাও। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানার যে বিধান রাখা হয়েছে, তার ভয়ে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অতি মুনাফার লোভ খানিকটা সংবরণ করবে বলে প্রত্যাশাও অসঙ্গত নয়। আর কিছু না হোক, সরকার যে আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা আমলে নিয়েছে_ এটাও ইতিবাচক। আমাদের মনে আছে, এর আগে জোট সরকারের জাঁদরেল অর্থমন্ত্রী পেঁয়াজ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীর পূর্বসূরি তো বলেছিলেন কম খেতে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, কেবল আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তার কষ্টার্জিত অর্থকে টার্গেট করে গড়ে ওঠা বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ কঠিন। আমরা সেই ক্ষেত্রেই সতর্কতা উচ্চারণ করতে চাই। এর আগে দেখা গেছে চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রশাসন তৎপর হয়েছে বটে; লাভ হয়নি। বাঙালির পেটের ভাতের চাল নিয়েও অনেকবার কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী স্বয়ং বাজার পরিদর্শন করেছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন; পাগলা ঘোড়া থামানো যায়নি। গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান চালিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে যে, বাজার সিন্ডিকেটে কেবল ব্যবসায়ীদের একটি অংশই জড়িত নয়। যে সরিষা দিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ভূত ছাড়াতে চান, সেখানেই রয়েছে ভূতের আসর। সিন্ডিকেটের হাত নাকি এত লম্বা যে, তা আন্তর্জাতিক বাজার পর্যন্তও পেঁৗছে যায়। এই পরিস্থিতিতে নতুন আইন কি ধন্বন্তরী হতে পারে? বস্তুত সরিষার ভূত তাড়ানো না গেলে অতীতের ব্যর্থতারই পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা কিন্তু অমূলক নয়। সামনে রমজান মাস। প্রতি বছর এই সময় বাজারে নানা কারসাজি চলে। আমরা চাই, তার আগেই বিলটি আইনে পরিণত হোক। আমরা এর কার্যকর প্রয়োগ দেখতে চাই। আর বাজারের স্থিতিশীলতাই হবে নতুন আইনের কার্যকারিতার একমাত্র মাপকাঠি। চীনা নেতার জনপ্রিয় উক্তিটি এখানেও প্রাসঙ্গিক- বিড়াল সাদা না কালো, তার চেয়ে বড় হচ্ছে সেটা ইঁদুর ধরতে সক্ষম কি-না। একটি আইনের সফল প্রয়োগে নাগরিক কর্তব্যের কথাও ভুলে যাওয়া চলবে না। বাণিজ্য ও ন্যায্যতা নিয়ে তৎপর বেসরকারি সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। জনসাধারণের অর্থে জনবিরোধী শক্তির মহোৎসব বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হচ্ছে সমুচিত জবাব।
 

No comments

Powered by Blogger.