সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আইন-একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ

বাজারে অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। বাজার ওঠানামা করবে- এটাই বাজারের সাধারণ নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশে বাজারের চিত্র ভিন্ন। এখানে জিনিসপত্রের দাম কেবলই বাড়ে। কখনো কমে না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে স্থির হলে বাংলাদেশের বাজার সূত্র অনুযায়ী সেটাই হচ্ছে স্থিতিশীল অবস্থা।


এই বাজারে আবার একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেটের ইশারায় বাজারে জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করে। কিন্তু অদৃশ্য সেই সিন্ডিকেট আজ অবধি দৃশ্যমান হয়নি।
বাংলাদেশের বাজারের একটি নির্দিষ্ট চরিত্র আছে। অর্থনীতির কোনো সূত্রই বাংলাদেশের বাজারের জন্য সাধারণভাবে প্রযোজ্য নয়। এখানে নিত্যপণ্যের মূলবৃদ্ধি নির্ভর করে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার ওপর। আমদানিনির্ভর বাজারের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামার দিকে খুব একটা দৃষ্টি দেন বলে মনে হয় না। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের দাম বাড়বেই। সামনে রোজা। রোজা সামনে রেখে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সারা বছরের মুনাফা করে। এবারও রোজা সামনে রেখে বাড়ছে ভোজ্য তেল ও ছোলার দাম। এ ছাড়া ইফতারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এমন পণ্যের দামও যে বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মসলার পাশাপাশি বাড়বে মাছ-মাংসের দামও। এই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে যে সিন্ডিকেট ক্রিয়াশীল, সেই চক্রকে রুখতেই জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস করা হয়েছে। গত রবিবার বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া সংশোধনী, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব নাকচ করা হয়। এই বিলে সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ বিলের আওতায় বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষা ও সিন্ডিকেট প্রতিরোধে একটি কমিশন গঠনের বিধানও রাখা হয়েছে। পাস হওয়া বিলের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, একজন চেয়ারপারসন ও অনধিক চারজন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে। কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্যদের সরকার নিয়োগ দেবে। তবে তাদের অর্থনীতি, বাজার, জনপ্রশাসন কিংবা আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে।
কমিশন যদি কারো বিরুদ্ধে আদেশ দেয়, তবে ওই ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে পুনর্বিবেচনার বা আপিলের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে বলে বিলে বিধান রাখা হয়েছে। তবে এ আপিলের ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেটের বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা সব সময় শোনা গেলেও এই চক্রকে দমন করা যায়নি। এবার জাতীয় সংসদে বিল পাসের পর এই চক্রকে চিহ্নিত করে দমন করা সহজ হবে বলে আমরা আশা করছি। রোজা সামনে রেখে এই বিল পাস একটি সময়োপযোগী ব্যবস্থা বলে মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.