সালাম ভালোবাসার সেতুবন্ধ by এমদাদুল হক তাসনিম

সালামের আভিধানিক অর্থ সম্ভাষণ, অভিবাদন। এটি একটি দোয়াও, যাতে একে অপরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। ইসলামের নীতি হলো, কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া। আর তার উত্তর দেওয়াও ওয়াজিব। সালামের সূচনা হয়েছে সৃষ্টির আদি থেকেই।


আল্লাহতাআলা প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। ফেরেশতারাও তার উত্তর দেন। তখন তাদের পরস্পর কথামালাই সালাম হিসেবে গণ্য হয়। সালামের এ প্রচলন তখন থেকেই আজ পর্যন্ত চলে আসছে।
হুজুর (সা.) সালামের ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তাগিদ দিয়েছেন এর প্রচার-প্রসারের জন্য। বলেছেন কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হলে প্রথমে সালাম দেওয়ার কথা। যেমন_ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, 'রাসূল (সা.) বলেছেন, কথার আগে সালাম দেবে।' তিরমিজি
আমাদের সমাজে সালাম শব্দটি ব্যাপক প্রচলিত এবং সৌজন্য বিনিময়ের মাধ্যম। চলতে-ফিরতে, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, মোবাইল ফোনে প্রথমে আমরা সালাম দিই। কিন্তু এ সালামের রয়েছে অনেক সওয়াব, গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফজিলত। আবু উমামা থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, 'হুজুুুুর (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই উত্তম যে আগে সালাম প্রদান করে।' আবু দাউদ
আগে সালাম দিলে অহঙ্কার নামে ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত_ 'হুজুর (সা.) বলেন, আগে সালাম প্রদানকারী ব্যক্তি অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকে।' বাইহাকি
সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হুজুর (সা.) বলেন, 'যখন দু'জন মুসলমানের মধ্যে পরস্পর সাক্ষাৎ হয়, সালাম মুসাফা করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।' তিরমিজি
সালামের রয়েছে অনেক ফায়দা, উপকারিতা। সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। দূর হয় মনের মনোমালিন্যতা, পঙ্কিলতা। মুক্ত থাকা যায় অহঙ্কার, আত্মম্ভরিতা থেকে। সাধন করা যায় হৃদয়ের স্বচ্ছতা, কোমলতা ও আত্মিক উন্নতি। পরস্পরে সৃষ্টি হয় হৃদ্যতা, সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার সেতুবন্ধ। এর কল্যাণে সমাজ থেকেও অপসারিত হয় বিবাদ-বিসংবাদ, ঝগড়াঝাঁটি।
কারণ পরস্পর ভালোবাসা দৃষ্টিকটু, গর্হিত, অযাচিত সব আচরণ ও কাজ থেকে বিরত রাখে। আর তখন সমাজেও সৃষ্টি হয় শান্তি-সাম্যের পরিবেশ। হাদিসেও সালামকে ভালোবাসার মাধ্যম বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত_ 'হুজুর (সা.) বলেন, তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পর ভালোবাসা ছাড়া ইমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিসের কথা বলে দেব না যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তা হলো তোমরা বেশি বেশি সালামের প্রচার করো।' _মুসলিম শরীফ
 

No comments

Powered by Blogger.