ইলিয়াসের মেয়ের জন্মদিনের চিঠি

নিজের জন্মদিনে বাবার সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে 'খোলা চিঠি' লিখেছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল। ঢাকার মানারাত স্কুলের ছাত্রী (ইংরেজি মাধ্যম) সাইয়ারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে লিখেছে, Mrs. Sheikh Hasina, 18 June is my birthday. You have


to give me a gift that is my father. I want my father before my birthday. Every year on my birthday he presents me many gifts. (sic) [বাংলায় : মিসেস (মাননীয়া) শেখ হাসিনা, ১৮ জুন আমার জন্মদিন। আমাকে একটি উপহার দিতে হবে আপনার- তাহলো আমার বাবা। আমি বাবাকে জন্মদিনের আগেই চাই। প্রতিবছর জন্মদিনে আমাকে অনেক উপহার দেন তিনি]। সাইয়ারা চিঠিটি লেখে ১৪ জুন।
নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর মেয়ে সাইয়ারা নাওয়ালকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সোমবার দুপুরে শুভেচ্ছা জানাতে ইলিয়াস আলীর বনানীর বাসা 'সিলেট হাউস'-এ যান। সাইয়ারাকে বুকে জড়িয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি; জিজ্ঞাসা করেন, 'কেমন আছো মামণি?'
সে সময় পুরো পরিবেশ গম্ভীর হয়ে ওঠে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সাইয়ারা নাওয়ালের জন্য একটি বার্থ ডে কেক নিয়ে যান। তিনি ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা এবং ইলিয়াসের অন্য দুই সন্তানের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন। ওই সময় সাংবাদিকরা সাইয়ারাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলে বিষণ্ন মনে নিশ্চুপ বসে থাকে সে।
পরে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা এখনো সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, ইলিয়াস আলীকে জীবিত তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দিন। এটা সরকারেরই কর্তব্য। দুই মাস আগে ইলিয়াস আলীকে সরকারের লোকজনই গুম করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সূত্রে আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি।'
সাইয়ারার লেখা 'খোলা চিঠি'র কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'এই ছোট্ট মেয়েটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে বাবাকে ফেরত চেয়েছে। কী বেদনাদায়ক বিষয় এটি!'
ফখরুল বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁকে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও বলেছিলেন, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করা হবে। কিন্তু দুই মাস পার হওয়ার পরও তাঁকে আমরা ফেরত পাইনি।'
বিএনপি ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রেখেছে- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য অর্থহীন উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, 'গোটা জাতি এখন জানে কারা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। অযথা এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই। সরকারের পক্ষে সবই সম্ভব। তাই তাঁকে ফিরিয়ে দিন। এভাবে একের পর এক গুমের ঘটনা ঘটছে; কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। আশা করেছিলাম, সরকার ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে একটি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেবে, তাও দেয়নি।' আবেগ আপ্লুত ফখরুল কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়েছিল ইলিয়াসের পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওখান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া না পাওয়ায় সাংবাদিকদের কাছে মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে চিঠির বিষয় প্রকাশ করেন ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা।
সূত্র জানায়, সাইয়ারা নাওয়ালের চিঠিটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছায়নি। তাহসিনা রুশদীর লুনা সাক্ষাতের জন্য আবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সাক্ষাতের সময় এখনো জানানো হয়নি।
সিলেট হাউসে বিষাদের ছায়া
সিলেট হাউসের পঞ্চম তলায় ইলিয়াসের বাসায় সাইয়ারার জন্মদিনে ছিল বিষাদের ছায়া। তাহসিনা রুশদীর লুনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি এখনো অপেক্ষায় আছি, আমার স্বামী ফিরে আসবেন। আল্লাহর ওপর আমি ভরসা করে আছি।'
প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বামীকে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দাবি করে লুনা বলেন, 'এর কোনো ফলাফল আমি এখনো পাইনি। তবু এখনো আশায় আছি।'
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফের দেখা করতে চান ইলিয়াসের স্ত্রী
ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালককে ফিরে পেতে আবারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। তবে অনুমতি পেলে আবারও তাঁর সঙ্গে দেখা করব।'
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর এখনো স্বামীর সন্ধান পাননি তিনি। তার পরও তাঁকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা করছেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা।
লুনা বলেন, 'শনিবার আমি নামাজ পড়ছিলাম। এমন সময় সাইয়ারা খামে করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জন্মদিনের আগেই বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য লেখা একটি চিঠি নিয়ে আসে। একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর একই বর্ণনা দিয়ে একটি চিঠি লেখে।'
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর কার্যালয় থেকে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে লুনা বলেন, 'এখনো কোনো ফলাফল পাইনি। তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাসে আমি আশাবাদী। সত্যিকার তদন্তের মাধ্যমে ফলাফল বের হয়ে আসবে। তবু আল্লাহর ওপর ভরসা করে আছি- তিনি আমার স্বামীকে জীবিত ফিরিয়ে দেবেন।'
ওই সময় লুনার সঙ্গে ছিলেন মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল, দুই ছেলে আবরার ইলিয়াস ও লাবিব সারার, ইলিয়াস আলীর ছোট ভাই মো. তাসকির আলী।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারওয়ার, সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি নেতা আবু নাসের মো. রহমতউল্লাহ, কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.