বর্ষায় সড়ক বিপর্যয়ের আশঙ্কা-ব্যবস্থা গ্রহণের সময় আছে এখনো

'আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/আসে বৃষ্টি সুবাস বাতাস বেয়ে/এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/নতুন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে' রবীন্দ্রনাথের বৃষ্টি যেমন সুবাস বাতাস বেয়ে আসত, তেমনি এখনো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপের পর আষাঢ়ের গগন ছেয়ে গভীর গরজনে নামে বৃষ্টি।


কিন্তু আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এবং ভূ-প্রকৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। আজ আর ঘন বরষায় ঘরের বাইরে না গিয়ে মানুষের জীবন চলে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়েছে অনেক বিস্তৃত। মাথায় বৃষ্টি নিয়েই ছুটতে হয় প্রয়োজনের তাগিদে। আর এমনই প্রয়োজনে সদ্য শুরু হওয়া বর্ষায় রাস্তাঘাটের বেহাল দেশের জনগণকে পুলকিত না করে বরং গভীর বিড়ম্বনায় ফেলতে শুরু করেছে। সারা দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ভেঙে আছে, অসংখ্য রাস্তায় সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। বিশেষ করে মহানগর ঢাকায় এ সমস্যা সবচেয়ে তীব্র। পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, সারা দেশে পাঁচ হাজার কিলোমিটার সড়ক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা অত্যন্ত বেহাল, অর্থাৎ চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে আছে। তাই গত বছরের মতো এ বছরও বর্ষা মৌসুমে যান চলাচল, পরিবহনে দুর্ভোগ নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত মৌসুমে রাস্তাঘাটের দুর্দশার কারণে একদিকে যেমন জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও দেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুত পরিবর্তন আনতে যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর প্রচেষ্টা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিতও হচ্ছে। কিন্তু সমস্যার জাল এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যে দ্রুত সমাধান হবে বলে প্রতীয়মান নয়। প্রথমত, বর্ষা মৌসুমের আগেই রাস্তাঘাট মেরামতের মাধ্যমে বর্ষায় চলাচলের উপযুক্ত করতে হয়। সে কাজটি হয়নি। দ্বিতীয়ত, আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে মারাত্মকভাবে। রয়েছে সড়ক উন্নয়নকাজে দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাজনৈতিক বিবেচনায় বৈষম্য, যা রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। খোদ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ের পরিদর্শনে দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে পত্রিকার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অর্থসংকট। রয়েছে অর্থছাড় সংক্রান্ত জটিলতা। এ সমস্যাগুলো দূর করতে না পারলে যোগাযোগমন্ত্রীর সদিচ্ছা খুব বেগবান করা সম্ভব হবে না।
সড়ক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভয়ানক সব সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক, চিত্র পরিচালকসহ অনেক মেধাবী ও সৃজনশীল ব্যক্তিকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার বেশির ভাগ প্রধান কারণ ছিল সড়কের দুরবস্থা। এটি এখন সর্বজনবিদিত যে বাংলাদেশে যে ধরনের গতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচল করে তার জন্য সড়কগুলো যথোপযুক্ত নয়। সুতরাং সড়ক মেরামত, সংস্কার ও উন্নয়নে আরো জোর দেওয়া প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমের সবে শুরু। এখনো সময় আছে। সব ধরনের জটিলতা দূর করা গেলে এবং মাঠ পর্যায়ে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা সম্ভব হলে সড়কের বেহাল অবস্থা কিছুটা হলেও সহনীয় হবে। চিরাচরিত জটিলতা ও ধীরগতি বহাল থাকলে এ বছরও শুধু যে জনজীবন বিপন্ন হবে তা নয়, সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এবং অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া দ্রব্যমূল্য আরো চড়া হবে। সুতরাং সরকারকে অতি গুরুত্ব দিয়ে যেকোনো মূল্যে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট চলাচলের উপযুক্ত রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.