প্রধানমন্ত্রী ইলিয়াসের পরিবারকে গণভবনে ডেকেছেন কাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও সন্তানদের আগামীকাল বুধবার গণভবনে সন্ধ্যা ৬টার সময় ডেকেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেন। ১৩ দিনেও স্বামীর সন্ধান না পাওয়ায় লুনা এখন অনেকটাই হতাশ।


ইলিয়াস আলীর স্ত্রী গতকাল সোমবার নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য একটু সময় ও সুযোগ দেন। আর যেকোনো মূল্যে ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করে দিন। তিনি যেখানেই থাকুক, যারাই তাঁকে নিয়ে গিয়ে থাকুক, দয়া করে তাঁকে উদ্ধার করে সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমরা আজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।'
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বনানীর নিজ বাসভবন সিলেট হাউসে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় নিখোঁজ বিএনপি নেতার ছেলে আবরার ইলিয়াস ও লাবিব সারা এবং মেয়ে সাইয়ানা নাওয়াল পাশে ছিল। লুনা জানান, তাঁর পরিবার শুধু অনিশ্চয়তাই নয়, অনিরাপত্তা ও আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে।
তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, 'সংবাদপত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের কথা জানছি। যদি কোনো শর্তও থাকে, তা আমাদের জানানো হোক। যেকোনো শর্তে আমরা তাঁকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই। অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা কোনো কিছুই আমরা চাই না। আমি সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আল্লাহর কাছে মোনাজাত করি_তিনি যেন কখনো কাউকে আমাদের মতো এমন বিপদে ও অনিশ্চয়তার মধ্যে না ফেলেন। গত ১৭ এপ্রিল রাতে বাইরে থেকে ফেরার পথে আমার স্বামীকে বাড়ির কাছাকাছি থেকে গাড়ি থামিয়ে জোর করে তুলে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তুলে নেওয়া হয়েছে আমাদের গাড়িচালক আনসার আলীকে। কারা নিয়ে গেছে আমরা জানি না। আমরা শুধু তাঁদের ফেরত পেতে চাই। তাঁরা যেখানেই থাকুক, যারাই তাঁদের ধরে নিয়ে গিয়ে থাকুক, খুঁজে বের করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।'
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী আরো বলেন, 'আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সরকার তাঁর বিরুদ্ধে আইনসম্মত যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। তাতে আমাদের কারো কোনো আপত্তি থাকবে না। যদি কোনো বিষয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আটক করাও হয়ে থাকে, তাহলে অন্তত আমাদের জানানো হোক ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন, তিনি কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। একজন নাগরিক হিসেবে অন্তত এটুকু দাবি করা কোনো অন্যায় চাওয়া নয়।'
লুনা বলেন, 'আমার স্বামী রাজনীতি করতেন। কিন্তু আমি ও আমার সন্তানরা কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমরা কেউ কখনো রাজনীতি করতেও চাই না। দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি আমার স্বামীকে জীবিত ফিরে পেতে চাই। আমার সন্তানরা বারবার প্রশ্ন করে, আব্বু কোথায়, কখন আসবে? আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। আমার কোনো জবাব নেই। আমার সন্তানরা তাদের বাবাকে ফেরত চায়। আমার বৃদ্ধ শাশুড়ি তাঁর সন্তানের পথ চেয়ে বসে আছেন। ইলিয়াস আলীকে তিনি তাঁর বুকে ফেরত পেতে চান।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লুনা জানান, সর্বশেষ তিন দিন আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁরা বলেছে, তাঁরা চেষ্টা করছেন, তদন্ত করছেন। লুনা বলেন, '১৩-১৪ দিনে তাঁদের ফল একই। তাহলে কিভাবে আমি আশাবাদী হব?'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ প্রার্থনা প্রসঙ্গে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সকাতরে আবেদন জানিয়েছি, তিনি যদি সুযোগ দেন তাহলে আমরা পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে চাই।'

No comments

Powered by Blogger.