কৃষি খাতে ভর্তুকি-যে বিনিয়োগে অশেষ প্রতিদান

আলপিন-নির্মাণ সামগ্রী থেকে বিমান, ভোজ্যতেল-চিনি-মসলা থেকে জ্বালানি ও বস্ত্র_ কত কিছুতেই না বাংলাদেশ পরনির্ভর। কিন্তু কৃষিচিত্র ভিন্ন_ সবুজ ধানের ক্ষেতে সোনালি ধানে ছেয়ে আছে দেশ। একের পর এক ধানের মৌসুমে ফলন হচ্ছে বাম্পার।


প্রকৃতই বাংলাদেশের কৃষি খাতের পুনরুত্থান ঘটেছে এবং এমন অভিমতে সায় মিলবে আমজনতা থেকে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ অনেকেরই। বিশেষ করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে অর্জিত হয়েছে বড় ধরনের সাফল্য। স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, কিন্তু তাদের খাদ্যের জোগান আসছে আমাদের কৃষি খাত থেকেই। রোববার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন_ আগামী বছরের মধ্যে দেশ খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এ খাতে অর্জনের পেছনে কৃষক ও কৃষি মজুরদের অনন্য অবদান রয়েছে। দেশি-বিদেশি কৃষিবিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সর্বোপরি কাজ করেছে সরকারের নীতিগত সহায়তা। কৃষকদের উন্নত বীজ-সার-সেচযন্ত্র-ডিজেল-কীটনাশক প্রভৃতি উপকরণ সংগ্রহে ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। মহাজনদের দ্বারস্থ না হয়ে তারা যাতে অপেক্ষাকৃত কম শর্তে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি যুগ যুগ ধরে অভাবিত ধারণা ভূমিহীন ও বর্গাচাষিদের জন্য ব্যাংক ঋণ নিশ্চিত করা হয়েছে। পেঁয়াজ-রসুন-আদার মতো মসলা জাতীয় শস্যের উৎপাদন বাড়াতে নামমাত্র ২ শতাংশ সুদে ঋণের জোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী এ ধরনের ভর্তুকির বিরোধিতা করছে। কিন্তু সরকার সেটা গ্রহণ করেনি। আগামীতেও কৃষকদের জন্য ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা অবশ্যই সহায়তা চাই। একইসঙ্গে এ ক্ষেত্রে কৌশল প্রণয়নে দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। আর কিছুদিনের মধ্যেই নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হবে এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার যথার্থ প্রতিফলন প্রত্যাশিত। বাজার অর্থনীতির নিয়মে দেশ চলবে, এমন কথা অনেকেই বলেন। কিন্তু কৃষকদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বক্তব্যের 'পুঁথিগত' অনুসরণ শুধু কৃষি খাতের জন্য নয়, সার্বিক অর্থনীতির জন্যও বিপর্যয় ডেকে আনবে। উপকরণের মূল্য 'বাজারদরে' কিনতে বাধ্য হলে তার প্রভাব খাদ্যশস্য এবং অন্য ফসল উৎপাদনে পড়বেই এবং তা সামাল দিতে সরকারকে আরও অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই। জ্বালানি তেল এবং আরও অনেক ধরনের অপরিহার্য পণ্য ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ডলার-ইউরো পেতে আমদানিকারকদের মাঝে মধ্যেই সমস্যায় পড়তে হয়। এ অবস্থায় খাদ্যশস্য আমদানির জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারে বড় ধরনের টান পড়বে তাতে সন্দেহ নেই।
কৃষকদের উৎপাদন কাজে ভর্তুকি-সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নতুন করে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান ধারণা হচ্ছে, কৃষক শ্রমে-ঘামে ফসল ফলাবে যতটা না নিজের তার চেয়ে ঢের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোক্তার স্বার্থে_ এর পরিবর্তন সহজ নয়। আমন মৌসুমে কৃষক ন্যায্যমূল্য পায়নি। আলু-মসলা-শীতের সবজিতেও বাজার ছিল কৃষকের জন্য দারুণ দুশ্চিন্তার। এবারের বোরো মৌসুমেও কৃষকরা হতাশ হবে বলে ইতিমধ্যে এ শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা ঘটলে কৃষকের দুর্গতির শেষ থাকবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.