মে দিবস-শ্রমজীবী মানুষের বঞ্চনা দূর হোক

প্রায় সোয়াশ' বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণের যে দাবিতে আন্দোলন চলছিল, তা বহু আগেই আদায় হয়েছে। সেই আন্দোলনে শ্রমিক সমাজের ত্যাগ ও সংগ্রাম এখন গোটা বিশ্বেই অধিকার আদায়ের প্রেরণা হয়ে উঠেছে। মে দিবস এখন বৈশ্বিক উৎসবের দিন।


বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে এ দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি। কিন্তু তারপরও সংগ্রাম ও অধিকারের সেতুবন্ধ হিসেবে মে দিবসের তাৎপর্য ফিকে হয়ে যায়নি। বরং এখন এর পরিসর আরও ব্যাপক। শুধু কলকারখানার শ্রমিক নয়, কায়িক শ্রমে যুক্ত সবার কাছেই এখন মে দিবস অনুপ্রেরণার দিন। এমনকি কৃষি খাতে নিযুক্ত মজুরদের কাছেও পেঁৗছে গেছে এ দিবসের মর্মবাণী_ ৮ ঘণ্টা কাজ চাই। উন্নত জীবনধারণের মতো মজুরি চাই। সমৃদ্ধ দেশগুলোর শিল্প শ্রমিকরা অনেক আগেই এ অধিকার আদায় করে নিয়েছে। কোথাও কোথাও সপ্তাহে শ্রমঘণ্টা ৪০ ঘণ্টারও কম। আধুনিক প্রযুক্তি তাদের জন্য এ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের সংগঠিত শিল্পের শ্রমিকরাও এ অধিকার ভোগ করছে। কিন্তু যে হাজার হাজার অসংগঠিত ও ছোট-মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ শ্রমিক কাজ করছে, সেখানে এ অধিকার দারুণভাবে উপেক্ষিত। নানা কৌশলে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক শিল্পে এ পরিস্থিতি আরও হতাশাজনক। দেশের বিভিন্ন ঘরের কোণে উদয়াস্ত কাজ করা গৃহকর্মীদের অবস্থা আরও করুণ। তাদের জন্য কর্মঘণ্টাই নির্ধারিত নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মজুরিও মেলে না। আমরা জানি, বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু তার গতি খুবই ধীর। আমরা আশা করব, নীতিনির্ধারকরা বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেবেন। কমবেশি ২০ লাখ শ্রমিকের এমন অনিশ্চিত জীবন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়েই থাকবে। অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের দেশে চরম দারিদ্র্য কমছে। কিন্তু বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত হলে, উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন ঘটবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এবারের মে দিবসে সেই শপথ আরেকবার শানিত হোক। বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন।
 

No comments

Powered by Blogger.