নিঃস্বার্থ ও দায়িত্বশীল একজন মানুষের চিরপ্রস্থান-সাংবাদিক অশোক সেনের মৃত্যু

যশোরের সেই সদালাপী, প্রগতিশীল, দীর্ঘ সংগ্রামী অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া কিন্তু সরল মানুষটি আর নেই। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক যশোরের সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিজগতের নিরলস কর্মী অশোক সেন গত রোববার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দুরারোগ্য ক্যানসার তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়।


মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। একটি বর্ণিল ও বলিষ্ঠ জীবন অতিক্রম করা এই মানুষটির প্রতি আমরা জানাই আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা, তাঁর শোকার্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি জানাই সহমর্মিতা।
গত শতকের ষাটের দশক থেকে প্রগতিশীল ও অধিকারকামী আন্দোলন-সংগ্রামের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন অশোক সেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রprovicadহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বনগাঁওয়ের টালিখোলায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যশোর জেলা শাখার সভাপতি, একই সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সিপিবির যশোর জেলা শাখার সম্পাদক এবং যশোর উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে তিনি যশোরে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঠিকানা ও দৈনিক কল্যাণ এবং জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন। প্রথম আলো প্রকাশের প্রথম দিন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই দৈনিকের যশোর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।
যশোর উন্নয়ন, ভবদহ জলাবদ্ধতা, নদী বাঁচাও আন্দোলন কিংবা যশোর পৌরপার্কে উদীচীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, উদীচীর জাতীয় সম্মেলন, রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন, রবীন্দ্রসংগীত পরিষদ, গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ, সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ সব ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
আমাদের সহকর্মী অশোক সেন ছিলেন সেই প্রকৃতির মানুষ, যাঁরা আজীবন অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে মহত্ আদর্শে কাজ করে যান, কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে রয়ে যান নিরহংকার ও বিনয়ী। তিনি তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে রইবেন।

No comments

Powered by Blogger.