পুত্রবধূ ও নাতির হাতে খুন বৃদ্ধা চন্দ্রা বানু by মাসুদ রানা

শেষ পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের পশ্চিম মোগরারচর এলাকায় নিহত বৃদ্ধার পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দুজনকে। বৃদ্ধা চন্দ্রা বানু তাঁর এক পুত্রবধূর পরকীয়া প্রেমের ঘটনা জেনে গিয়েছিলেন। এরপর পুত্রবধূ শিপন বৃদ্ধার নাতি মিলনকে দিয়ে শাশুড়িকে খুন করায়।


মিলন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার জেলা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। শিপন এখনো পুলিশি হেফাজতে।
গত শনিবার থেকে সন্ধান মিলছিল না ৭৫ বছর বয়সী চন্দ্রা বানুর। পরের দিন রবিবার তাঁর একটি হাত এবং পরিহিত শাড়ি পাওয়া যায় বাড়ির পাশের একটি ডোবায়। সোমবার তাঁর মাথা দুই টুকরো অবস্থায় পাওয়া যায় পাশের ধলেশ্বরী নদীতে। দেহের অবশিষ্ট অংশ এখনো উদ্ধার হয়নি। অভিযুক্ত মিলন স্বীকারোক্তিতে বলেছে, খুনের পর সে তার দাদির দেহ কয়েক টুকরা করে পানিতে ফেলে দেয়।
কেরানীগঞ্জ থানার এসআই শাহাদত হোসেন খান মিলনের উদ্ধৃতি দিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, চন্দ্রা বানুর ছোট ছেলের স্ত্রী শিপনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল তাদের পরিবারের আরেক সদস্য আনোয়ারের সঙ্গে। শিপনের স্বামী সফর আলী সৌদী আরব থাকেন। শিপন সম্পর্কে আনোয়ারের আপন চাচি হলেও তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এই বিষয়টি জেনে যান চন্দ্রা বানু। এরপর তিনি শিপনকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, আনোয়ার দেশে ফিরলে তাঁকে সব তিনি জানিয়ে দেবেন। এর পরই শিপন কৌশলে হাত মেলায় তার আরেক ভাতিজা মিলনের সঙ্গে।
এসআই শাহাদত বলেন, মিলনকে গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সে পুলিশকে জানায়, চাচি শিপন তাকে ভয় দেখিয়ে দাদিকে খুন করতে বাধ্য করেছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে এসআই শাহাদত বলেন, শিপন পরিকল্পনা করলেও খুন মিলন একাই করে।
মিলন বলেছে, ঘটনার কয়েক দিন আগে চাচি তাকে ঘরে ডেকে বলে চন্দ্রা বানুকে খুন করতে হবে। মিলন সায় না দিলে শিপন হুমকি দিয়ে বলে, 'আমাকে সহযোগিতা না করলে, আমি তোর বিরুদ্ধে নোংরা কথা বলে তোর সংসার ভেঙে দেব। আমি সবাইকে বলে দেব- তুই আমার সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করেছিস।' এতে মিলন ভয় পেয়ে যায় এবং এ হত্যাকাণ্ডের জন্য রাজি হয়। দুজনের সিদ্ধান্ত মতেই মিলন শুক্রবার রাতে সিঁদ কেটে দাদির ঘরে ঢুকে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর পাশের ডোবার ধারে নিয়ে তাঁর দেহ কয়েকটি টুকরা করে। এরপর কিছু অংশ ফেলে দেওয়া হয় ডোবায়, কিছু অংশ ফেলা হয় অদূরে ধলেশ্বরী নদীতে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধা চন্দ্রা বানুর সাত ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বামী সমির উদ্দিন দুই বছর আগে মারা গেছেন। চন্দ্রা বানু একা থাকতেন এবং পৃথকভাবে রান্না করে খেতেন। তাঁর দুই ছেলে সফর ও জাফর দেশের বাইরে থাকেন। শনিবার সকাল থেকে চন্দ্রা বানুকে না পেয়ে বাসার সবাই সিদ্ধান্ত নেয়- ঘটনাটি পুলিশকে জানাবে।
পুলিশ জানায়, রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের একটি ডোবা থেকে বৃদ্ধার হাত উদ্ধারের পর ঘটনার তদন্তে নামে তারা। এরপর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিলন ও শিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিপনকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ শিপন স্বীকার করেছে বলেও পুলিশ জানায়। বৃদ্ধার আরেক নাতি, কথিত প্রেমিক আনোয়ার এখন পলাতক।
চন্দ্রা বানুর চাচাতো ভাই মোতালেব মোল্লা ও জামাতা নুরু কালের কণ্ঠকে জানান, চন্দ্রা বানু পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কিছু সম্পত্তি সম্প্রতি বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। ওই টাকা তাঁর কাছেই ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর টাকা ও তাঁর কিছু স্বর্ণালংকারও খোয়া গেছে।

No comments

Powered by Blogger.