তৈরি পোশাক শিল্পের ব্র্যান্ডিং স্বপ্ন-শ্রমিকের কথা আগে ভাবতে হবে

তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের সাফল্য দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে নিঃসন্দেহে। বিশ্বের বিশাল বাণিজ্য বাজারে এযাবৎ যেটুকু জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ, তা প্রধানত তৈরি পোশাকের কারণে। দেশের ভেতরে ব্যবসায়ী মহল, সরকার কিংবা অর্থনীতিবিদদের কাছে এ শিল্প যেমন গুরুত্ব পাচ্ছে, দেশের


বাইরেও ক্রেতা মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব বিপণন সম্মেলন। এতে দেশের ও দেশের বাইরের ব্যবসা ও বিপণন বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও সরকারের সম্মানিত প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। এসব মূল্যবান চিন্তা-পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আমাদের কী কী লক্ষ্য অর্জন করতে হবে, সর্বাগ্রে তা ভাবা খুবই জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তাঁর বক্তব্যে বলেন, সত্তরের দশকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশ, আশির দশকে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, এখন তা সাড়ে ৬ শতাংশ। ১৯৯০ সালের ৫৭ শতাংশ দারিদ্র্যের হার কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ৭ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
যেহেতু উপরোক্ত কথাগুলো কোনো রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য নয়, বরং অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের উচ্চাশা, তাই আমরা উৎসাহী হই। গরিব দেশ ধনী দেশে রূপান্তরিত হবে- দেশের মানুষের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে। তবে সব পরিকল্পনা ও যোগ-বিয়োগের সঙ্গে হিসাবে রাখতে হয় আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবনতির বিষয়টি। বিশ্ব বিপণন সম্মেলনে স্বাভাবিক কারণে প্রাধান্য পেয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের কথা। তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং হতে পারে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। চীন যেমন বিশ্বে পণ্য উৎপাদনে, ভারত ও জাপান প্রযুক্তি বাজারে নিজেদের ব্র্যান্ড করে তুলেছে, ঠিক তা-ই করার সুযোগ রয়েছে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের। সুযোগ ও সম্ভাবনা সবই রয়েছে আমাদের। সরকারের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, 'আমাদের অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বিদেশি বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। এ জন্য বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে সরকার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবেও বলছে- সবই ইতিবাচক দিক। পোশাক শিল্পের ব্র্যান্ডিং স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ রাখতে হবে, যাতে বন্দরের কাজ, পরিবহনে নৈরাজ্য, হরতাল-ধর্মঘট প্রভৃতি কারণে বায়ারদের কাছে সুনাম নষ্ট না হয়। তৈরি পোশাকের গুণগত মান বৃদ্ধি ও বজায় রাখার জন্য পোশাক শ্রমিকের প্রতি সরকার ও মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টাতে হবে। শ্রমিকদের জীবনযাপনের মান উন্নত হতে হবে। তাদের সুস্থ-নীরোগ স্বাস্থ্যসহ বেঁচে থাকা জরুরি। তাহলেই তাঁরা শ্রম ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারবে। কোনো শিল্প-প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড হতে পারে না বেতন-ভাতায় অসন্তুষ্ট ও অপুষ্টিপীড়িত শ্রমিক নিয়ে। এ বিষয়টি যেন উদ্যোক্তা ও বাজার বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় আসে।

No comments

Powered by Blogger.