সমাধানে চাই টেকসই পরিকল্পনা-গরমের শুরু, বিদ্যুৎ-সমস্যারও শুরু

গরম শুরু হতে না-হতেই আবার প্রকট হয়ে উঠেছে বিদ্যুৎ-সংকট। বাড়ছে লোডশেডিং। সেচের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে শহরাঞ্চলে লোডশেডিং করা হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেচের জন্যও বিদ্যুৎ মিলছে না। এতে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে সেচের কার্যক্রম, যা বোরো ধানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।


সরকার যা-ই বলুক, বাস্তবতা হচ্ছে, বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। সরকারের মেয়াদে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে উৎপাদনক্ষমতা আট হাজার ৩০৫ মেগাওয়াটে দাঁড়ালেও রক্ষণাবেক্ষণ, কারিগরি নানা সমস্যা ও গ্যাস-সংকটের কারণে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয় না। সরকারের হিসাবেই বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াটের মতো। ফলে ঘাটতির পরিমাণ পরিষ্কারভাবে দুই হাজার মেগাওয়াট। এ পরিস্থিতি অসহনীয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদন একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি সময়সাপেক্ষ। এখানে সহজ সমাধানের পথ নেই। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিত্তিক কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তা তেমন ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে হয় না। পাকিস্তানেও এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়নি। সমপ্রতি সে দেশের আদালত এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবৈধ ঘোষণা করেছেন।
কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমরা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। গ্যাস-সংকটের কারণে নতুন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসের অভাবে বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই তাদের উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। অন্যদিকে আমদানিনির্ভর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেশি। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও তা সমন্বয় করা যাচ্ছে না। তাই সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কম। কিন্তু রাজনৈতিক বা অন্য বিবেচনায় সরকার দেশের কয়লা উঠিয়ে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিতে পারছে না। কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা কতটুকু বাস্তবসম্মত, সে প্রশ্নও বিশেষজ্ঞ মহল থেকে উঠেছে। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি সত্যিই জটিল অবস্থায় রয়েছে।
সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ালেও বাস্তবতা হচ্ছে, এখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে জনগণকে। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না কৃষক। শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা মনে করি, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই সরকারকে এই সমস্যা সমাধানের পথে এগোতে হবে। গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া, কয়লার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নানা দিক কাজে লাগানো—সবকিছুই সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। অন্যদিকে বিদ্যুতের অপচয় রোধেও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.