গ্লোবাল সোশ্যাল ভেঞ্চার কম্পিটিশন (জিএসভিসি)-এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন by কিঙ্কর আহ্সান

মেহেদী, বাঁধন, সাইমুম ও হাসানুল—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের মেধাবী স্বপ্নবাজ এই চার তরুণ তখনো জানেন না, দিনটি অন্য রকমভাবে শুরু হতে যাচ্ছে তাঁদের। মার্চের ১০ তারিখ। একটানা কাজের ধকলে কিছুটা ক্লান্ত তাঁরা।


দুই চোখের স্বপ্ন আর বুকভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভারতের হায়দরাবাদে অংশগ্রহণ করছেন গ্লোবাল সোশ্যাল ভেঞ্চার কম্পিটিশনের (জিএসভিসি) আফ্রো-এশিয়া অঞ্চলের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়। এই প্রতিযোগিতায় এশিয়া ও আফ্রিকার মেধাবী শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন ব্যবসা নিয়ে তাঁদের নতুন ধরনের ভাবনাগুলো তুলে ধরার জন্য। ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের চূড়ান্ত ফলাফলে এশিয়া-আফ্রিকা অঞ্চলের সেরা দল ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার তরুণের দল ‘গ্রিননোভেশন টেকনোলজিস’কে। এর ফলে দলটি যোগ্যতা অর্জন করে ১৮ এপ্রিল ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ফাইনালে লড়াই করার জন্য।
‘যখন প্রতিযোগিতায় এশিয়া-আফ্রিকা অঞ্চলের সেরা দল হিসেবে গ্রিননোভেশন টেকনোলজিসের নাম ঘোষণা করা হলো, তখন ভালো লাগছিল খুব। বিদেশের মাটিতে এসে বাংলাদেশের একটি দলের এই অর্জন সত্যিই দারুণ! দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই আমরা।’ বলছিলেন দলটির নেতা মুহম্মদ সাইমুম হোসাইন। টানা এক বছরের কষ্টের পর এমন অর্জনের কথা কখনোই ভুলতে পারবেন না ফিন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়ুয়া চার শিক্ষার্থী সাগর মেহেদী হাসান, মুহম্মদ সাইমুম হোসাইন, বাঁধন মজুমদার ও হাসানুল কাদের মির্জা।
৪৫ হাজার ডলার পুরস্কারের জন্য লড়াই করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণ উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়িক ভাবনাগুলো ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে যেন বাস্তব হয়ে ওঠে, তার জন্যই দেওয়া হয় এই অর্থ। এ বছর ৫০টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নিচ্ছেন ব্যবসা আর ব্যবসাসংক্রান্ত তাঁদের চিন্তা যেমন: তাঁদের প্রস্তাবিত পণ্যের সহজলভ্যতা, সুলভ মূল্য, উপকারিতাসহ আরও নানা বিষয়ে।
কী নিয়ে আমাদের তরুণ এই উদ্যোক্তাদের প্রকল্প? উত্তরে গ্রিননোভেশন টেকনোলজিস দলের অন্যতম সদস্য সাগর মেহেদী হাসান বলেন, ‘আবাসন সমস্যা নিরসন সহজ কথা নয়। দেশের সাধারণ মানুষের এই সমস্যা নিয়ে ভাবনা থেকেই ‘পাট থেকে ঢেউটিন’ তৈরি করে বিক্রির কথা মাথায় আসে আমাদের। এই পণ্য একই সঙ্গে সুলভ মূল্যের এবং পরিবেশবান্ধব হবে।’ সাহায্যের জন্য তাঁরা ছুটে যান মোবারক আহমেদ নামের এ দেশের একজন উদ্যোক্তার কাছে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বিষয়টি নিয়ে। তারপর বছর খানেকের বেশি সময় ধরে পাট থেকে ঢেউটিন তৈরির বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। নিজেদের বাসায় অথবা বিকেলের দিকে ব্যবসায় অনুষদের ক্যানটিনে বসে সামাজিক এই ব্যবসা নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেন দলের সদস্যরা। কখনো কখনো রাত জেগে কাজ করতে হতো তাঁদের। পড়াশোনার যাতে ক্ষতি না হয়, সেদিকেও ছিল সজাগ দৃষ্টি। পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করে খুব। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়াই করার সাহসটা আসে এখান থেকেই। কাজ করতে গিয়ে শিক্ষকদের সহযোগিতা পেয়েছেন তাঁরা সব সময়।
‘জয়ী হওয়ার পর দায়িত্বটা বেড়ে গেছে অনেক। নিজেদের ঘিরে তৈরি হয়েছে কাছের মানুষদের প্রত্যাশার চাপ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ফাইনালে ভালো কিছু করার জন্য এখন দিনভর কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’ দলের আরেক সদস্য বাঁধন মজুমদার বলছিলেন এ কথা।
এই প্রতিযোগিতার বাইরেও গ্লোবাল সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ কম্পিটিশনে (জিএসইসি) অংশগ্রহণ করে এই দলটি জিতে নিয়েছে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিত ফাইনালে এই দলের পক্ষে সাইমুম অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বের ৪৯টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছিলেন এখানে।
দলের সবার সঙ্গে কথা বলে টের পাওয়া যায়, দেশটাকে বদলে দেওয়ার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী তাঁরা। একজন তো কথায় কথায় বলেই বসলেন, ‘চারপাশটা দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হাল ছেড়ো না বন্ধুরা। আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হবই।’ তাঁদের এই সাহস, প্রাণচাঞ্চল্য দেখে বোঝা যায়, ভয় নেই আর। ঘুরে দাঁড়াবে এবার দেশ। বিশ্বের মানুষ তাদের নিজের প্রয়োজনেই শিগগির জেনে নেবে এই দেশের সাহসী মানুষ ও তাদের সাহসিকতার কথা।

No comments

Powered by Blogger.