সাক্ষাৎকার-অতীতের দলীয়করণের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেব না by মোমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী

সাক্ষাৎকার গ্রহণ :ওয়াকিল আহমেদ হিরন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জয়নুল আবেদীন এবং মোমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী। প্রথমজন বিএনপির এবং দ্বিতীয়জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।


উভয়েই আইনজীবীদের স্বার্থ সংরক্ষণে দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছেন। সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তারা বার ও বেঞ্চের সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন

সমকাল : সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বারের উন্নয়ন ও মর্যাদা রক্ষায় আপনার প্রথম পদক্ষেপ কী হবে?
মোমতাজ : সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই আদালতের উন্নয়ন ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যে কোনো মূল্যে এই সুপ্রিম জুডিসিয়ারির মর্যাদা ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখব। তিনি বলেন, অতীতে বারের সভাপতি ও সম্পাদকের কার্যালয় দলীয়করণ হয়েছে। এটা সবাই দেখেছি। তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন, আগামী ৮ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণের পর বারের সম্পাদকের অফিসটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না। সব আইনজীবীর জন্য এটা থাকবে উন্মুক্ত। দলীয় প্রভাবে সম্পাদকের অফিসটি কাজ করবে না।
সমকাল : আইনজীবীদের মধ্যে দলীয় কারণে সৃষ্ট বিভাজন নিরসনে আপনার কোনো উদ্যোগ থাকবে কি?
মোমতাজ : আইনজীবীদের মধ্যে দীর্ঘদিন রাজনীতির বিভাজন চলে আসছে। অতীতে বারের সভাপতি ও সম্পাদকের অফিস দলীয় কার্যালয়ের মতো চলেছে। আগামীতে সম্পাদকের অফিসটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে। এই অফিসে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না। কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্ট বারকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করব না। সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে আইনজীবীদের কল্যাণে পেশার উৎকর্ষতা সাধনের জন্য কাজ করব। বারকে আমরা সংকীর্ণ রাজনীতি ও বিতর্কের ঊধর্ে্ব রাখব।
সমকাল : বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আপনার ভূমিকা কী থাকবে?
মোমতাজ : বার ও বেঞ্চের মধ্যে বর্তমানে যথেষ্ট সুসম্পর্ক রয়েছে। কীভাবে একে আরও সুসংহত ও দৃঢ় করা যায় সে ব্যাপারে সভাপতি ও কমিটির অন্য নেতাদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এছাড়া যখনই বার ও বেঞ্চের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি লক্ষ্য করা যাবে তখনই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সমকাল : মামলাজট দূর করতে আপনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি?
মোমতাজ : হাইকোর্টে অগণিত বিচারাধীন আপিল, সিভিল ও ক্রিমিনাল মামলা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। এসব বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তির জন্য কোনো বেঞ্চ গঠন করা যায় কিনা_ সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তরুণ আইনজীবীরা রিট ও ক্রিমিনাল বেঞ্চে শুনানি করতে পারেন না। তাদের সুবিধার্থে রিট এবং ক্রিমিনাল বেঞ্চে সপ্তাহে একদিন শুনানির জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায় কিনা_ এ ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে।
সমকাল : আইনজীবীদের স্বার্থ রক্ষায় আপনার পদক্ষেপ কী?
মোমতাজ : আইনজীবীরা তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। আইনজীবীদের পেশার কল্যাণে যেন কাজ করতে পারি এবং সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি সে লক্ষ্যে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাব। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৫ তলা একটি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ওই ভবনটি নির্মাণ করা হলে এতে সব ধরনের সুবিধা থাকবে। যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাসরুটে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের জন্য বাস চলাচলের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বারের ক্যান্টিনের খাবারের মানের উন্নতি সাধনের চেষ্টা করা হবে।
সমকাল : বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মোমতাজ : আমি মনে করি, বর্তমান সরকারের সময়ে বিচার ব্যবস্থা সঠিক ও সুন্দরভাবে চলছে। বিচারাঙ্গন যেভাবে চলছে আমি মনে করি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। বিচার প্রার্থীরাও ন্যায়বিচার পাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা, আইনজীবীদের কল্যাণ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। সবার সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ রক্ষায় আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সমকাল : বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে_ আপনার মন্তব্য কী?
মোমতাজ : উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মত থাকতে পারে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধান বিচারপতির সুপারিশ অনুযায়ী সরকার বিচারক নিয়োগ দিচ্ছে। এখানে কোনো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।

No comments

Powered by Blogger.