কুষ্টিয়া শহর রক্ষা বাঁধ-ঠিকাদারদের নিম্নমানের কাজ

অনিয়ম-দুর্নীতির ফেরে পড়ে কুষ্টিয়া শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণের আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাঁধটির বিভিন্ন কাজে নির্ধারিত উপকরণ ব্যবহার না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নমানের বা কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট উপকরণ না দিয়েই ফাঁকিবাজির মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে বরাদ্দ অর্থ


তুলে নিচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী ফুঁসে উঠলে বা মৌসুমি বন্যার পানির হালকা তোড়েই বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে বা তলিয়ে গিয়ে জনদুর্ভোগের মাত্রাকে বাড়াতে পারে। এ ব্যাপারে সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত এক প্রকৌশলী ঠিকাদারদের সরকারি অর্থ হরিলুটের এমন কর্মের বিরোধিতা করে এখন নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সুবিধার জন্য বাঁধ নির্মাণের মূল সাইট পরিবর্তন করিয়ে সাধারণ মানুষের ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা ভবিষ্যতে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লক নির্মাণ, মাটি ব্যবহার, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি। অনেক স্থানে সিমেন্টের পরিবর্তে খোয়া ও বালু ব্যবহার করেই ব্লক নির্মাণকাজ সেরেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করেও এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল উত্তোলন ঠেকাতে পারেননি। সম্ভবত এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্থানীয় ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পর্ক থাকায় এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করার সাহস দেখাতে পারছে। কুষ্টিয়া শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণের দাবি ছিল এখানকার জনগণের দীর্ঘকালের। এতে বর্ষা মৌসুমে শহরটি বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা পেত। কিন্তু এটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদাররা নির্ধারিত উপকরণ ব্যবহার না করায় এবং কোথাও কোথাও ফাঁকি দিয়ে বিলের অর্থ তুলে নেওয়ায় বন্যার পানির তোড়ে বাঁধের অনেক স্থানে ধসে পড়া, এমনকি নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এতে বরাদ্দ করা ৩০ কোটি টাকা পানিতে বিলীন হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকাবাসী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অর্থাৎ জনসচেতনতা ও কর্মকর্তা পর্যায়ে দায়িত্বশীলতার মনোভাব স্পষ্ট। এখন উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের জনদরদি ও উন্নয়নমুখী মানসিকতা প্রদর্শন করার পালা। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে উন্নয়নকর্মে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নজির স্থাপন করা যেতে পারে। দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে এলাকাবাসীর মতো আমরাও এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা প্রত্যাশা করি।
 

No comments

Powered by Blogger.