সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা হোক-বিসিএস পরীক্ষা ছাড়া ক্যাডারভুক্তি

সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই বেশ কিছুসংখ্যক চিকিৎসক বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।


গতকাল রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৮৬ সালের ১৭ মের আগে স্বাস্থ্য বিভাগে ইনসার্ভিস ট্রেইনি হিসেবে এবং ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির আগে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন—এমন চিকিৎসকদের বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় নতুন একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে এবং প্রশাসনসংক্রান্ত সচিব কমিটি তা অনুমোদনও করেছে। এই অনুচ্ছেদবলে নতুন ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকেরা অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন যে তারিখে, সেই তারিখ থেকেই তাঁরা জ্যেষ্ঠতা পাবেন।
স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলছেন, এর ফলে তাঁদের পদোন্নতি তিন থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে যাবে। কিন্তু আপত্তির পেছনের বড় যুক্তি সম্ভবত এটা নয়। এখানে কিছু ন্যায্যতার বিষয় রয়েছে। ১৯৮২ সাল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করে আসছেন এমন চিকিৎসকদের সামনে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ এসেছিল। তাঁদের অনেক সহকর্মীই তা করেছেন। কিন্তু এক হাজার ৩৬২ জন হয় বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেননি, অথবা অংশ নিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এখন তাঁদের পরীক্ষা ছাড়াই স্বাস্থ্য ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত করা হলে এবং সেই অস্থায়ী নিয়োগের তারিখ থেকেই তাঁদের জ্যেষ্ঠতা গণনা করা হলে যাঁরা পরবর্তী সময়ে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের মেধা ও যোগ্যতার মূল্য থাকে না। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তী সময়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন বলে এখন নতুন ক্যাডারভুক্তদের তুলনায় জুনিয়র হয়ে যাবেন, কারণ নতুন ক্যাডারভুক্তদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে তাঁদের অস্থায়ী নিয়োগের তারিখ থেকেই।
সুতরাং এটি কোনো ন্যায্য সিদ্ধান্ত নয়। এর ফলে স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকদের মধ্যে যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হবে, তা সার্বিক চিকিৎসাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে এ কথাও বলা দরকার, বর্তমান সরকার ২০১০ সালে যে তিন হাজার ৫৫১ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে, তাঁরাও পিএসসির কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই স্বাস্থ্য ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত হবেন—এটিও ভালো সিদ্ধান্ত নয়। দেশজুড়ে আরও অনেক চিকিৎসক নিয়োগ করা প্রয়োজন বটে, কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করে সেরা চিকিৎসকদের নিয়োগ করা দরকার। তবে জ্যেষ্ঠতাপ্রত্যাশীদের মধ্যে হয়তো কিছু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত থাকবেন। সরকারের উচিত হবে তাঁদের অবসরকালীন ন্যায্য সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এ ধরনের সমস্যা রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি। স্বাস্থ্য প্রশাসন যে রুগ্ণ, এ ঘটনা তারও নির্দেশক। এর যেন কখনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.