ট্যাবলয়েডের দুর্দিন!

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিডিয়া সংস্থা 'নিউজ করপোরেশনে'র চেয়ারম্যান রুপার্ট কিথ মারডক। মারডক সাম্রাজ্য এতটা দুর্দিন এর আগে কখনও দেখেছে কি? বন্ধ করে দিতে হচ্ছে সর্বাধিক প্রচারিত ট্যাবলয়েড, অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ব্রিটিশ স্কাই ব্রডকাস্টিংয়ের (বিস্কাইবি) ৬১ শতাংশ শেয়ার দখলের সোনালি সম্ভাবনা, পুলিশি জেরা আর তদন্ত গ্রাস করতে চলেছে সংস্থার একের পর এক রাঘববোয়ালকে।


'ফোন কেলেঙ্কারি'কে এরই মধ্যে কিন্তু 'মারডকদের ওয়াটারগেট' বলে বর্ণনা করা শুরু হয়ে গেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন দু'দুটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ ঘোষণা করেছেন। একটি ফোনে আড়িপাতা এবং পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত; অন্যটি সামগ্রিকভাবে সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা সংক্রান্ত। তবে কি শেষ অবধি জেরার মুখে পড়তে হতে পারে খোদ মারডকদেরও?
মারডকপুত্র জেমস বৃহস্পতিবারই বলে দিয়েছেন, 'নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড' (এনওডবিল্গউ) বন্ধ করে দিচ্ছেন তারা! খবর জোগাড় করার তাগিদে ফোনে আড়িপাতা, পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার মতো মারাত্মক সব অভিযোগের আঁতুড়ঘর ব্রিটেনের এই এক নম্বর রবিবাসরীয় ট্যাবলয়েডের নিউজরুমই তো! অভিযোগ, সেসব কীর্তিকলাপ ধামাচাপা দিতে নাকি লাখ লাখ ই-মেইল নথি এর মধ্যেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে! কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা মানছে না। তাদের দাবি, তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতাই করছে তারা।
অবশ্য এমন দাবি না করেই বা উপায় কী? এরই মধ্যে পুলিশ আটকে দিয়েছে অফিসের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ, ই-মেইল অ্যাকাউন্ট। জট যেখানে গিয়ে পেঁৗছেছে, ব্রিটেনের সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক কেষ্টবিষ্টু মায় রাজপরিবারসুদ্ধ জড়িয়ে গেছে।
এনওডবিল্গউর আড়িপাতার জালে পড়েনি কে? প্রিন্স উইলিয়াম, অভিনেতা হিউ গ্রান্ট, যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত ব্রিটিশ সেনাদের পরিবার, খুন হয়ে যাওয়া স্কুলছাত্রী ... তালিকা অনন্ত। তথ্য বের করার জন্য পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ কার বিরুদ্ধে? কোনো ছোটখাটো, অতি বেপরোয়া রিপোর্টার নন। গ্রেফতার হয়েছেন ট্যাবলয়েডের রাজপরিবারবিষয়ক বিভাগের সাবেক সম্পাদক ক্লাইভ গুডম্যান। গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক সম্পাদক অ্যান্ডি কুলসন, প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে একসময় কাজ করেছেন যিনি। ২০০৭-এ এই রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠদের ফোনে আড়িপাতার অপরাধ প্রমাণিত হয় কুলসনের অধীন এক রিপোর্টারের নামে। এনওডবিল্গউ থেকে তখন ইস্তফা দেন কুলসন। তার পরই তাকে নিয়োগ করেন ক্যামেরন। ক্যামেরন বলছেন, সিদ্ধান্তটা তারই ছিল, ভুল ছিল।
মারডক অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে একটি সংবাদপত্রের মালিকানা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে জীবন শুরু করেছিলেন। ব্রিটেনে সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করলেন ১৯৬৯-এ। প্রথমে 'নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড', তারপর কিনলেন দৈনিক 'দ্য সান', তাকে দিলেন ট্যাবলয়েডের রূপ। ১৯৮১ সালে 'দ্য টাইমস' ও 'সানডে টাইমস' মারডকের দখলে এলো। ১৯৭৬ সালেই আমেরিকায় কেনা হয়েছে 'নিউইয়র্ক পোস্ট'। একে একে আসবে 'টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স', শুরু হবে ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল 'ফক্স নিউজ'। 'ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল'-এর সিংহভাগও আসবে মারডকদের হাতে। ব্রিটেন ও আমেরিকার রাজনীতি ও সংবাদমাধ্যমে মারডকের সমতুল্য প্রভাবশালী আর কেউ ছিলেন না। আর আজ মারডকের অন্যতম প্রিয় 'সন্তান' এনওডবিল্গউ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে মান বাঁচানোর তাড়নায়!
সংবাদজগতের একটা বড় অংশ কিন্তু মনে করছে, এ দুর্বিপাক আসলে অমোঘ নিয়তি। রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে যেনতেন প্রকারে গরমাগরম মচমচে মসলাদার খবর পরিবেশনই ছিল মারডক সাম্রাজ্যের তুরুপের তাস। খবরকে বিনোদনের মোড়কে হাজির করায় মারডকের জুড়ি ছিল না। সংবাদমাধ্যমের একাংশের মতে, আজ নিজের জালেই নিজে জড়িয়েছেন মারডক। সংবাদ সংগ্রহের তাড়নায় কোনো কিছু পরোয়া না করে ক্রমাগত যেসব গর্ত খুঁড়ে গেছেন, আজ তারাই হাঁ করে তাকে গিলতে আসছে। সূত্র :ইন্টারনেট
 

No comments

Powered by Blogger.