মা ও মেয়ে এসিডদগ্ধ

বরগুনা শহরের উপকণ্ঠে লাকুরতলা এলাকায় বুধবার রাতে রিমা আক্তার (২৫) নামের এক গৃহবধূ ও তাঁর আড়াই বছরের মেয়ে তামান্না এসিডদগ্ধ হয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রিমার পরিবারের অভিযোগ, রিমার আগের ঘরের মেয়েকে (তামান্না) প্রথম স্বামীর কাছে দিয়ে আসতে রাজি না হওয়ায়
ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর (রিমা) দ্বিতীয় স্বামী মজিবুল হক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় মজিবুল হককে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার বরগুনা সদর থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মজিবুল হক পলাতক।
রিমার মা মনোয়ারা বেগম জানান, বনিবনা না হওয়ায় মাস ছয়েক আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে রিমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর থেকে তামান্না রিমার সঙ্গে আছে। মাস দেড়েক আগে রিমা বরগুনা সদর উপজেলার ফুলতলা গ্রামের মজিবুল হককে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাঁরা বরগুনা শহরের লাকুরতলা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে থাকতেন। বিয়ের কিছুদিন না যেতেই তামান্নাকে তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য রিমাকে চাপ দিতে থাকেন মজিবুল হক। কিন্তু রিমা এতে রাজি হননি। এ নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে রিমা ও মজিবুলের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
মনোয়ারা বেগম আরও জানান, বুধবার রাতে তিনি (মনোয়ারা) তাঁর ছোট ছেলেকে নিয়ে রিমাদের ভাড়াবাড়ির দোতলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত পৌনে তিনটার দিকে রিমার চিৎকার শুনে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। এরপর তিনি দোতলা থেকে নেমে এসে দেখেন রিমা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন এবং পাশে কান্নাকাটি করছে তামান্না। পরে তিনি প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন এবং তাঁরা বুঝতে পারেন রিমা এসিডদগ্ধ হয়েছেন। এরপর দ্রুত ভ্যানে করে রিমা ও তাঁর মেয়েকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের মেঝেতে প্রায় অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন রিমা। মাঝেমধ্যে ঠোঁট দুটি নড়াচড়া করলেও তিনি কিছু বলতে পারছিলেন না। পাশে মামা জলিলের কোলে বসে যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করছে তামান্না।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকারা জানান, রিমার মুখমণ্ডলের প্রায় ৮০ শতাংশ এসিডে ঝলসে গেছে। এ ছাড়া ডান বাহু, বুক ও পেটের বেশির ভাগ জায়গা মারাত্মক দগ্ধ হয়েছে। তাঁর মেয়ে তামান্নার মুখমণ্ডল, হাত, পা, পেট ও পিঠের আংশিক দগ্ধ হয়েছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর গতকাল দুপুরে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আইন সহায়তা কেন্দ্রের সহযোগিতায় রিমা ও তাঁর মেয়েকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
ব্র্যাকের আইন সহায়তা বিভাগের বরগুনা সদর উপজেলা ব্যবস্থাপক সেলিম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসিডদগ্ধ রিমা ও তাঁর মেয়ের অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের ঢাকায় পাঠিয়েছি।’
গতকাল সকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে রিমা ও তাঁর মেয়েকে দেখতে আসেন বরগুনা সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আজিমুল হক ও বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন ফকির। পরে তাঁরা এসিডদগ্ধ রিমার বাড়িতে যান।
এএসপি আজিমুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রিমার স্বামী মজিবুল হক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। পুলিশ তাঁকে আটক করার চেষ্টা করছে।’

No comments

Powered by Blogger.