বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

৩৬২ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। আনিস মোল্লা, বীর বিক্রম জানা হয় নাই তাঁর বীরত্বগাথা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিস মোল্লা ১৯৭১ সালে চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।


মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বীর বিক্রম খেতাব পান। চাকরি থেকে অবসর নেন ১৯৭৮ সালে। অবসর নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করছিলেন। তিন-চার বছর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘ কয়েক বছর রোগভোগের পর ১৯৯৩ সালে মারা যান।
আনিস মোল্লার তিন ছেলে, চার মেয়ে। মেয়েদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেরা সবাই বাড়িতে থাকেন। নানা পেশায় যুক্ত। কিন্তু তাঁরা কেউ আনিস মোল্লা কোথায় যুদ্ধ করেছেন তথ্য, সে দিতে পারেননি। বড় ছেলে মনির মোল্লা বলেন, তিনি শুনেছেন তাঁর বাবা ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৭১ সালে তাঁর বাবা রংপুরে কর্মরত ছিলেন। এর বেশি কিছু বলতে পারেননি। বিভিন্ন জনের কাছে খোঁজ করেও তাঁর বীরত্বকাহিনি জানা সম্ভব হয়নি।
রংপুরে ছিল ইপিআরের ১০ নম্বর উইং হেডকোয়ার্টার। উইংয়ের অধীনে ছিল পাঁচটি কোম্পানি ও একটি সাপোর্ট প্লাটুন। পাঁচটি কোম্পানির একটি ছিল চিলমারী, একটি মোগলহাট, একটি পাটগ্রাম, একটি জয়পুরহাট এবং একটি হেডকোয়ার্টারে।
রংপুর শহরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৩ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার। ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইপিআরদের আক্রমণ করে। ইপিআর হেডকোয়ার্টারে তারা বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করে। সেখানে অবস্থানরত বাঙালি ইপিআর সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হন। কিছু ইপিআর সদস্য পালাতে সক্ষম হন। অন্যরা শহীদ হন। ইপিআরের সদস্য যাঁরা পালাতে পেরেছিলেন, তাঁরা সমবেত হন তিস্তা নদীর পাড়ে। সেখানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় রংপুর ইপিআর উইংয়ের অন্য কোম্পানিগুলো। এরপর তাঁরা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান।
পরে সেক্টর গঠিত হলে তাঁরা বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সাবসেক্টরে। এই সেক্টরের অধীনে ছিল পাঁচটি সাবসেক্টর। ভজনপুর, পাটগ্রাম, সাহেবগঞ্জ, মোগলহাট ও চিলাহাটি। অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে এ সেক্টরের বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্ন। সেক্টরের নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ ছিলেন ইপিআরের সদস্য।
ইপিআরের সদস্যরা ৬ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। অসংখ্য যুদ্ধ এ সেক্টরে সংঘটিত হয়। এসবের কোনো এক যুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করে আনিস মোল্লা বীর বিক্রম খেতাব পান। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী, তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১০১।
আনিস মোল্লার পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের খায়েরঘাটচড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম তছিমউদ্দিন মোল্লা। মা মজিতন নেছা। স্ত্রী আছিয়া বেগম।
সূত্র: প্রথম আলোর মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা এ কে এম ফয়সাল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৬।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.