হোটেল থেকে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার

চট্টগ্রামের আবাসিক হোটেল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আগের দিন বুধবার রাত সোয়া আটটার দিকে তিনি এই হোটেলে ওঠেন। আনোয়ারার তালসরা দরবার শরিফে র‌্যাবের একটি দলের ডাকাতির ঘটনায় বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তার সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি তদন্ত করতে তিনি গত


মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আসেন। হোটেলে লাশ পাওয়া কর্মকর্তার নাম স্কোয়াড্রন লিডার মামুনুর রশিদ (৪৫)। তাঁর বাড়ি রংপুর শহরের ধাপ শ্যামলী লেনে। বাবার নাম মুজিবুর রহমান। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। গতকাল বিকেলে পুলিশ নগরের স্টেশন রোডের হোটেল সিলভার ইনের ২১৩ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। তিনি ঢাকায় বিমানবাহিনীর সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। বিকেলে বিমানবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হোটেলে ছুটে যান। মামুনুরের শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়রাও ছুটে যান হোটেলে। চট্টগ্রামে তাঁর ছোট ভাই ও শ্বশুরবাড়ির পক্ষের আত্মীয় ছাড়া আর কেউ নেই। তাঁর ভাই শেখ মকসুদুল হাসান অগ্রণী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। মকসুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাবি সকাল থেকে ভাইয়ার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন। ভাইয়া কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না। পরে ভাবি বিষয়টি জানালে আমি হোটেলে এসে ভাইয়াকে মৃত দেখতে পাই।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বুধবার রাতে হোটেলের অদূরে রাস্তায় স্কোয়াড্রন লিডার মামুন বমি করেন। হোটেলের কর্মী দিয়ে দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনে আনেন তিনি। গতকাল বিকেলে হোটেলের ওই কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, মামুনুর রশিদের পরনে একটি ট্রাউজার ছিল। বাঁ হাতটি বুকের ওপর ছিল। এ সময় খাটের পাশের টেবিলে তিনটি লেবুর টুকরো, চকলেট আর কিছু ট্যাবলেট ছিল। ট্যাবলেটগুলো হচ্ছে: হাইপেন এসআর, এমডোকল, ফেনাক এসআর, আরেকটি কুইনাইন। প্রতিটি পাতা থেকে দুটি করে ট্যাবলেট ছিল না। এ ছাড়া টেবিলের ওপর কাগজে পান ও একটি পানির বোতল দেখা গেছে। পানির বোতলটি খোলা ছিল। তবে তিনি পান খাননি। র‌্যাব-৭-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর জিয়াউল আহসান সরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, আনোয়ারার তালসরা দরগাহের একটি ঘটনায় বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। তালসরার ঘটনায় ওই কর্মকর্তা সম্পৃক্ত কি না, তা বিমানবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত দল তদন্ত করছে। এরই অংশ হিসেবে স্কোয়াড্রন লিডার মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত র‌্যাব-৭-এর কার্যালয়ে বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে তিনি কিছু তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ সংগ্রহ করেই স্টেশন সড়কের সিলভার ইন হোটেলে ওঠেন। জানা গেছে, মামুনুর রশিদ চট্টগ্রামে পৌঁছেই মঙ্গলবার রাতে বিমানবাহিনীর অফিসার্স মেসে অবস্থান করেন। আনোয়ারার দরগাহে র‌্যাবের ডাকাতির ঘটনায় বুধবার বিমানবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত শেষ হওয়ায় গতকাল তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। হোটেলের কর্মীরা জানান, একজন ঝাড়ুদার গতকাল সকাল ১০টায় মামুনের কক্ষে গিয়ে ধাক্কা দেন। কোনো সাড়া না পেয়ে ঝাড়ুদার হোটেলের ব্যবস্থাপককে জানান। পৌনে ১১টার দিকে আবার তাঁর কক্ষের দরজায় টোকা দেন হোটেল কর্মীরা। তাতেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর হোটেলের মালিককে ফোনে ঘটনাটি জানানো হয়। হোটেলের মালিক মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা পূর্ব-ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে বুধবার রাতে আমাদের হোটেলে আসেন। এরপর আমার দুই বন্ধুকে নিয়ে তিনি স্টেডিয়াম-সংলগ্ন কেজিএন নামের একটি কাবাব ঘরে খেতে যান। সেখানে তিনি একটি চিকেন টিক্কা, একটি নান রুটি ও সালাদ খেয়ে গাড়িতে করে ফিরে আসেন। হোটেলের কাছাকাছি এলে তিনি রাস্তার পাশে নর্দমায় বমি করেন।
মামুনুরের রাতের খাবারের সঙ্গী ছিলেন মাহমুদ আলী খান। মাহমুদ হোটেল মালিকের বন্ধু। মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার রাতে হোটেল থেকে বের হওয়ার পর মামুন সাহেব অসুস্থতা বোধ করছিলেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমরা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কেজিএনে যাই। সেখান থেকে ফেরার সময় তিনি গাড়ি থামাতে বলেন। রাস্তার পাশে তিনি বমি করেন।
সিআইডির ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ: গতকাল বিকেলে আবাসিক হোটেলে সিআইডির কর্মকর্তারা স্কোয়াড্রন লিডার মামুনের ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ করেন। এ সময় কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাঁর সুরতহাল করেন। তবে সুরতহালে শরীরে কোনো জখম বা অস্বাভাবিক কিছু পায়নি পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ গতকাল রাতে সিটি করপোরেশনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে রাখা হয়েছে। আজ সকালে লাশের ময়নাতদন্ত হবে। পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমেনা বেগম জানান, মেডিকেলে ময়নাতদন্ত হওয়ার পর মামুনুর রশিদের লাশ হেলিকপ্টারে করে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.