বিরোধী দল এলে সংসদ আরও কার্যকর হবে: স্পিকার-কাল সংসদে যেতে পারে বিরোধী দল

কাল রোববার জাতীয় সংসদে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোটের সাংসদেরা। এ দিন বিকেলে বিরোধীদলীয় নেতার সভাকক্ষে চারদলীয় জোটের সংসদীয় দলের সভা ডাকা হয়েছে। সভা শেষে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও এর জোটভুক্ত জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি ও বিজেপির সাংসদেরা অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন।

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রোববার সংসদীয় দলের সভা থেকে সংসদে যোগ দেওয়া বা না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সংসদে যেতে যায়। সরকারি দলকে বলব, ১৮ মার্চ সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের বিল আনুন।’
জামায়াতে ইসলামীর সাংসদ হামিদুর রহমান আযাদ প্রথম আলোকে বলেছেন, সংসদীয় দলের সভায় সিদ্ধান্ত হলে জোটের সব সাংসদ একসঙ্গে সংসদ অধিবেশনে যাবেন।
পদ বাঁচাতে নয়, দায়িত্ব পালনের জন্য আসুন—স্পিকার: স্পিকার আবদুল হামিদ গতকাল জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক সেমিনারে বলেছেন, বিরোধী দল সংসদে এলে সংসদ আরও কার্যকর হবে। কেবল সদস্যপদ রক্ষার জন্য নয়, বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের সংসদে আসার আহ্বান জানান স্পিকার।
বিএনপির সংসদে ফেরার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে দলটির নেতারা বলেছেন, বিরোধী দল কেবল সংসদ সদস্যপদ রক্ষার জন্য সংসদে আসছে।
গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, সদস্যপদ বাঁচাতে দু-এক দিনের মধ্যে বিরোধী দলের সাংসদেরা সংসদে আসবেন। তবে ঘণ্টা দুয়েকের বেশি তাঁরা থাকবেন না।
অবশ্য বিএনপির নেতারা দাবি করেন, সংসদ সদস্যপদ রক্ষাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য নয়। তাঁদের দল সংসদে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু সরকারি দলের অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে তাঁরা সংসদে যেতে পারেন না।
বাড়ছে চলতি অধিবেশনের মেয়াদ: সংসদ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অধিবেশন ২৯ মার্চ বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলার সম্ভাবনা আছে। মূলত বাজেট অধিবেশনের আগে আর কোনো অধিবেশন না ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য মুলতবি দিয়ে এই অধিবেশন বাড়িয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খালেদার কারণেই রোববার যোগ দিতে হচ্ছে: গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন সাংসদের অনুপস্থিতি ৮৩ দিন পেরিয়ে গেছে। সংসদ সদস্যপদ রক্ষার জন্য তাঁদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে অধিবেশনে যোগ দিতেই হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার ব্যাংককে যাওয়ার কথা। তাঁর ফিরে আসার আগেই যদি সংসদে সাতটি কার্যদিবস হয়ে যায়, তাহলে তিনি সদস্যপদ হারাবেন। এ জন্য রোববার সংসদে যোগ দিয়ে পরদিনই খালেদা জিয়া দেশ ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিএনপির সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি হিসেবে পলাতক আছেন। এই অধিবেশনে যোগ না দিলে কায়কোবাদের সদস্যপদ বাতিল হবে। দলীয় সূত্র জানায়, তিনি চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন দেশের বাইরে আছেন। এ ব্যাপারে স্পিকারের কাছে আবেদন করা হতে পারে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দলটি আগেই সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ১২ মার্চ মহাসমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাঁরা যোগ দিতে পারেননি।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক বৈঠকে সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এর পরই রোববার সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করেন খালেদা জিয়া। ওই রাতেই বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ সাংসদদের রোববার সংসদে হাজির থাকতে বলেন।
নির্দলীয় সরকার নিয়ে কথা বলবেন: বিএনপির নেতারা বলেছেন, সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে একটি রূপরেখা তুলে ধরতে পারেন। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার এ বিষয়টি তুলে ধরবেন।
মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে সব সময়ই ইতিবাচক আছে। চলতি অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আলোচনায় আসবে। তিনি বলেন, বিরোধী দলের মাত্র ৩৯ জন সাংসদ আছেন। তাই তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে তাঁদের বিল উত্থাপন কোনো কাজে আসবে না। এ ব্যাপারে বিল সরকারি দলকে আনতে হবে। প্রয়োজন হলে বিএনপি আলোচনায় অংশ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.