ইতিউতি-অসম্ভবকে সম্ভব করাই সফল রাজনীতি by আতাউস সামাদ

এক. ইদানীং রোজই খানিক পর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। ছোটবেলা থেকেই বর্ষাকালের মেঘ দেখতে ভালো লাগে আমার। এক কালো রঙেরই এত বিচিত্র রূপ দেখা যায় এই সময়টায়। কখনো ঘন কৃষ্ণবর্ণ, কখনো কখনো তাতে ছাই রঙের ছোঁয়া, কখনো ধূসর, আবার কখনো কালো, সাদা আর হালকা নীলের ক্ষণস্থায়ী কোলাজ থাকে আকাশজুড়ে।


সন্ধ্যার সময় আকাশজুড়ে কালো মেঘ থাকলে সাঁঝের নীল বর্ণটি কী চমৎকার গাঢ় নীলে পরিণত হয়। তখন হঠাৎ আকাশের দিকে চোখ পড়লে ভ্রম হয়। এ বুঝি মাঝরাত। দিনের বেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার সময় খোলা মাঠে বা কোনো বিস্তীর্ণ জলাশয়ের ওপর নৌকা কিংবা কোনো সেতুর ওপর থাকলে মনে হয় মাঠ, পানি, আকাশ_এ সব কিছু একাকার হয়ে গেছে সাদা-মাখানো হালকা ছাই রঙের আস্তরণে। ছাদের ওপর কার্নিশে অথবা গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ার শব্দ এই বৃদ্ধ বয়সেও ততখানি আগ্রহ নিয়ে শুনি ঠিক যেমনভাবে তা কান পেতে শুনতাম ছোটবেলায়।
তবে সদ্য শুরু হওয়া এবারের বর্ষায় আকাশের দিকে আগের অনেকবারের চেয়ে একটু বেশিবারই তাকাচ্ছি এবং তাও কিছু শঙ্কা নিয়ে। তার কারণ, একে তো এবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে বর্ষাকাল আসতে না আসতেই, তার ওপর ভারি বর্ষণ হচ্ছে প্রায় অবিরাম। এতে দেশের কোথায় কখন প্লাবন দেখা দেয় কে জানে। এ রকম বন্যা যদি আল্লাহর কৃপায় দেশজুড়ে না-ও হয়, তবু স্থানীয়ভাবে ক্ষতি করার ক্ষমতা এর কম নয়। ব্যক্তি বা পরিবারজীবনে এমন ছোট বন্যাও মস্ত ধ্বংসাবশেষ রেখে যেতে পারে। একখানা কুঁড়েঘর যার সম্বল সে তো খোলা আকাশকে নিজের জীবনের অংশ করে নেয়, যদি প্রবল বর্ষণে সেই পর্ণ কুটিরের আধখানা ভেঙে পড়ে অথবা বানে ভেসে যায়। আমরা প্রায় সারাক্ষণ সারা দেশের পরিসংখ্যান দিয়ে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করি বলে এ রকম হতভাগাদের কথা চট করে ভাবি না। তবে বাড়ির কাছে সড়কের পাশে ভাঙা বেড়া, ছেঁড়া চট আর নীল রঙের পুরনো পলিথিন দিয়ে বানানো আরেকটা ঝুপড়ি ঘর যোগ হতে দেখি বা পার্কের পাশে ফুটপাতে কয়েকটি শিশু নিয়ে একটি কঙ্কালসার নারীকে একটা পোঁটলা আগলে বসে থাকতে দেখি, তখন ভুরু ঈষৎ কুঁচকে ভাবি_এরা কোথা থেকে এল! তবে কঠিন বাস্তব হচ্ছে, আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখন নিচু জমি, ভরাট হয়ে যাওয়া খাল আর নদীর নতুন চরে বাস করে। অতিবৃষ্টি বা অকাল বন্যা তাঁদের জন্য খুবই বিপজ্জনক, আর পুরো বন্যা হলে তো কথাই নেই। তাই ভয়ে ভয়ে আকাশের কালো মেঘের আস্তরণের দিকে চেয়ে থাকি। ইদানীং আবার নতুন আপদ দেখা দিয়েছে। কিছুদিন ধরে দেখছি বঙ্গোপসাগরে এমন সময় নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে এবং এর ফলে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘটছে, যা আগে হতো না। আবার 'আইলা, সিডর' আসছে_এ রকম হুঁশিয়ারি শুনি প্রায়ই। একজন আবহাওয়াবিদ বললেন শুনলাম, এ বছর ও রকম নিম্নচাপের কারণে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তার ফলেই মনে হচ্ছে, বর্ষাকাল যেন একটু আগেই শুরু হয়ে গেল।
বর্ষা আরো কিছু অস্বস্তি তৈরি করে রাজধানীর যে এলাকায় আমরা বসবাস করি সেখানে। অবশ্য এমন নয় যে ঢাকা শহরের অন্যান্য পাড়ায় জলাবদ্ধতা, জমে থাকা কাদা, উপচে পড়া ড্রেন আর স্যুয়ারেজ, ওয়াসার ফুটো হয়ে যাওয়া পানির পাইপ এবং ভাঙা রাস্তা জীবনযাত্রার 'চলমান' সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলছে না। তা ছাড়া বৃষ্টি হলেই ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় দেখা দেয় ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টা স্থায়ী একের পর এক যানজট। এমন ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেলে একসময় শরীর ও মন দুই-ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে আমাদের যে বিশেষ সমস্যাটি হয় তা হলো, ভারি বর্ষণ হলেই মহাসড়কে অংশবিশেষ ও নিকটবর্তী 'লেক' নামের জলাশয়টির দিক থেকে দুর্গন্ধযুক্ত একটা গ্যাস ভেসে এসে শ্বাস রোধ করে ফেলে। কাজেই আজও বর্ষার মেঘ আর আগের বৃষ্টি দেখতে আগের মতো আগ্রহ থাকলেও তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বেশ কিছুটা ভয়। তাই আজকাল মাঝেমধ্যেই ঘন কালো মেঘের দিকে তাকাই আকাশ তার হাত থেকে খানিকট মুক্ত হলো কি না তা জানতে।
দুই. এখন থেকে রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের আগমন স্থায়ী রূপ নিতে চলেছে। এবার শুরু হলো রোজ বিকেলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দিকে আর সকালবেলায় খবরের কাগজের পাতার দিকে দুরু দুরু বক্ষ নিয়ে তাকানোর পালা। দেখতে হয়, কখন জানি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকে। সেই হরতাল কি এক দিনের, নাকি দু-তিন দিনের? এ প্রশ্নও থাকে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা হরতালের খবর একটু আগেভাগে পেতে চান। কারণ তাঁদের শুধু পণ্য আমদানি বা রপ্তানির সময়সূচি বদলাতে হয় তা-ই নয়, তাঁদের কোনো কাজে দপ্তরের বাইরে অন্য কোনো শহরে বা গ্রামে যে যেতে হয় সেই সফরসূচি বদলাতে হয় হরতালের কর্মসূচি অনুযায়ী। আবার তাঁদের অনেককে বৈঠক অথবা কর্মচারী প্রশিক্ষণ সম্মেলন এমন প্রয়োজনীয় কাজের দিন-তারিখও বদলাতে হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের পরীক্ষার সময়সূচি নতুন করে ঠিক করতে হয়। রোগীদেরও চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার কাজটা আগেভাগে সামলে নিতে হয়। আর দোকানিরা ভাবেন কিভাবে হরতালের দিনগুলোতে আয় বন্ধ থাকার ক্ষতিটা উদ্ধার করবেন। আর আমরা, যাদের বাড়ি থেকে বের হওয়াটা অত্যাবশ্যক নয় এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য যাদের ফেরিওয়ালা বা ভ্যানওয়ালারা সাহায্য করেন, ভাবি, হ্যাঁ, ট্রাফিক জ্যাম খুলে দেওয়ার জন্য পুলিশের দেখা না পাওয়া গেলে কি হবে এবার হাজারে হাজারে 'পুলিশ ভাইয়েরা' রাজপথ দখল করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেবেন। অবশ্য তাতে খুব একটা উল্লসিত বোধ করতে পারব না, কারণ তাদের বুটের লাথি আর পুলিশের আশপাশে 'অবস্থান নেওয়া' ক্ষমতাসীনদের লাঠি আর রামদার আঘাতে চেনাজানা ছেলেপেলেদের মধ্যে কে জানি আহত হয়, মোবাইল কোর্টের আইনভঙ্গকারী ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা জানি কতজনকে জেলে পাঠান এসব আতঙ্ক চেপে ধরে। আর হরতালের আগের সন্ধ্যায় ক'টা বাসে জানি আগুন লাগে, সেই ভয় তো আছেই। হরতালের সময় জোর বৃষ্টি নামলে অবশ্য উত্তেজনা খানিকটা কমে কারণ তখন পুলিশ, ঠেঙ্গাড়ে আর পিকেটার সবাই রাস্তা থেকে সরে কোনো ছাদের তলায় বা বারান্দায় আশ্রয় নেয়।
তবে বর্ষা তো আর সারা বছর থাকবে না কিন্তু রাজনীতিতে যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল তা কী সহজে কমবে? কাজেই হরতাল করার সময় বিরোধী দল পাবে এবং পুলিশ আর পেটোয়া বাহিনী পাবে হাত-পায়ের সুখ মেটানোর সুযোগ। সবাই জানেন, এই মুহূর্তে সরকার আর বিরোধী দল মুখোমুখি হয়ে পড়ল জাতীয় সংসদে সংশোধনী বিল পাস করে সরকারি দল তড়িঘড়ি করে সংবিধান থেকে সংসদ নির্বাচনের সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিল বলে। এই বিল পাস করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিরোধী নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'এই সংশোধনী দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে আওয়ামী লীগের স্বার্থ উদ্ধারের অনুকূলে। এতে দেশকে ২০০৬ সালের মতো এক অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো।' এ বিষয়ে তাঁর নিজ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে খালেদা জিয়া বলেছেন, 'জীবনের এই প্রান্তে এসে আমি আরেকবার দেশের স্বার্থে, জনগণের অধিকার রক্ষায় কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করেছি।' তিনি দেশবাসীকে রাজপথের কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে 'ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার' মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবারই বলেছেন, 'পৃথিবীতে যে সংসদীয় ব্যবস্থা কার্যকর আছে, সেখানে যেভাবে নির্বাচন হয় এখানেও সেই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে।' এই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে লক্ষ করে বলেন, 'আপনাদের কোনো ফর্মুলা থাকলে এখনো তা দিতে পারেন। অযথা আন্দোলনের নামে গণ্ডগোল করে জনগণকে কষ্ট দেবেন না, জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবেন না।' নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, 'আমরা যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিলাম, সেই উদ্দেশ্য, অর্থাৎ অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্য পূরণ হয়নি।' এখানে একটা কথা মনে পড়ল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন না হওয়ার তালিকায় ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেও অন্তর্ভুক্ত করছেন কি_যদি কেউ সরল বিশ্বাসে এমন একটি প্রশ্ন করে বসেন তাহলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগাররা কী উত্তর দেবেন? ওই নির্বাচনে জিতেই তো শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে একুশ বছর পর। আর ওই সরল লোকটির সঙ্গে যদি কোনো দুর্মুখ যোগ দিয়ে আরেকটি প্রশ্ন করে বসে, '২০০৮ সালের ডিসেম্বরে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল সেটা কি সুষ্ঠু হয়নি?'
আবার খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে এখন যদি কেউ প্রশ্ন করেন, '২০০৬ সালে বিচারপতি কে এম হাসান যখন সব বৃহৎ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেন না তখন তাঁর পরই যাঁকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার জন্য আহ্বান করা উচিত ছিল সেই সাবেক বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরীকে আপনারা মেনে নিলেন না কেন? যদি তা করতেন তাহলে তো আর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থার নামে সেনা শাসনের নিগড় পর্যন্ত যেতে হতো না,' তাহলে তাঁদের উত্তর কী হবে?
এদিকে টেলিভিশনের খবরে এক ঝলক দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, 'নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আরো কিছুদিন বহাল রাখার ইচ্ছা তাদের ছিল কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল আদালতের রায়ের জন্য তা করা সম্ভব হলো না।' মার্জনা ভিক্ষা করে বলি, অনেকের দৃষ্টিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য সঠিক নয়। তাদের যুক্তি, প্রথমত, আদালত তাঁদের সংক্ষিপ্ত আদেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় চৎড়ংঢ়বপঃরাবষু অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য অবৈধ ঘোষণা করেন কিন্তু তাঁদের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক প্রযোজ্য হবে এ নির্দেশ দেননি, দ্বিতীয়ত, আপিল আদালতের নির্দেশে সুষ্ঠুভাবে বলা ছিল, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের (অর্থাৎ আগামী দুটি সংসদ) নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে করা যেতে পারে জনগণ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা 'সুপ্রাচীন' ডকট্রিন অব নেসেসিটির উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারীরা বলছেন, আপিল আদালতের নির্দেশ মতে কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা অন্য কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে সদস্য বা প্রধান না করে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা যেত। সেই পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আলোচনা করলেই হতো। তাঁদের মতে আর যাই হোক, প্রধানমন্ত্রীর জন্য কোনো দলিলের মধ্যে তাদের সুবিধাজনক অংশটুকুকেই কেবল উদ্ধৃত করা আর বাকিটুকুকে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দেওয়া আদৌ উচিত বা নৈতিক বা শোভনীয় কাজ নয়।
আমরা রাজনীতিবিদের মুখেই শুনেছি, ঢ়ড়ষরঃরপং রং ঃযব ধৎঃ ড়ভ পড়সঢ়ৎড়সরংব (সমঝোতা বের করার কৌশল হচ্ছে রাজনীতি)। আমার যতদূর মনে পড়ে, আমি এ ধরনের আরেকটা মন্তব্য শুনেছি, 'চড়ষরঃরপং রং সধশবং ঃযব রসঢ়ঢ়ড়ংংরনষব ঃড় নব ঢ়ড়ংংরনষব' (রাজনীতি অসম্ভবকে সম্ভব করে)। আমরা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, আমাদের দেশটা যেন সত্যি সত্যি সংঘাতের মধ্যে পড়ে না যায়। আমাদের কামনা, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা উচ্চতর, সুন্দর ও প্রশংসার যোগ্য, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতিচর্চা শুরু করবেন। কটু কথা, অসত্য ও উত্ত্যক্ত করার মতো কথা কম বলবেন। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ খেটে খায়। আর তাদের বিরাট অংশ বেতনভুক চাকুরে নয়, তারা কোনো না কোনো উৎপাদন বা সেবাদানকারী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে অন্নসংস্থান করে। এই ধরনের নাগরিকরা পরিশ্রমী, সহনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। আমাদের রাজনীতিবিদরা যেন এঁদের সম্মান করেন। তাদের মধ্যে যাদের গুণ্ডা, বদমায়েশ ও দুর্নীতিপরায়ণ সহকর্মী আছে অন্তত তাদের যেন তাঁরা দূরে রাখেন। দেখবেন, তাহলেই বর্তমান বড় রাজনৈতিক সমস্যাটি সমাধানের জন্য আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে।
কিছু মনে না করলে এখানে ক্ষমতাসীন দলকে একটি অনুরোধ করি। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া এবং বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার লক্ষ্যে কয়েকটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছিল। তৎকালীন কমনওয়েলথ মহাসচিব এমেকার প্রতিনিধি স্যার নিনিয়ানও একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিকও দু-চারটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন একটি পক্ষপাতহীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যাপারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল সে সবেরই একটি বা দুটি বের করে বিএনপির কাছে প্রস্তাব দিতে পারেন, আসুন, আপনাদের ফর্মুলা নিয়েই শুরু করি।
এই পরামর্শ একান্তই আমার নিজের, কোনো শুভেচ্ছা গোষ্ঠী বা দলের নয়। এ ছাড়াও আমি মনে করি, বর্তমান উত্তেজনা প্রশমনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে এ বিষয়ে সরকার পক্ষের কোনো 'ফর্মুলা' থাকলে তা এখনই জনগণের কাছে প্রকাশ করা।
তিন. গত বছর কালের কণ্ঠে একটা লেখায় ১৯৭২ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন সরকারের আমলে ক'টা বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো হয়েছে ও তাতে কত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে। আমি তার তালিকা দিয়েছিলাম। সূত্রের নাম বলতে বাধা থাকায় ভয়ে ভয়ে ছিলাম, আমার লিস্টে কী জানি ভুল বের হয়। এখন স্বস্তির সঙ্গে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার (জুন ৩০, ২০১১) জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়ে (অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়) ১,৩১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়। এর মধ্যে মোট ১,২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকটি কেন্দ্রের চুক্তি তাঁর ১৯৯৬, ২০০১ মেয়াদের সরকারের সময় অনুমোদিত হয়। আমার লেখায় আমি দুটো কথা বলেছিলাম, (১) বাংলাদেশে প্রতিটি সরকারের আমলে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। সংখ্যায় বা শক্তিতে তা যাই হোক এবং (২) বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারগুলো অনেকখানি ধারাবাহিকতা রেখেছিল। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী।

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.