মনমোহন সিংয়ের মন্তব্য-বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানা প্রয়োজন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতি-সচেতন প্রত্যেক মানুষকে ভাবনায় ফেলেছে। ভারতের কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যেকোনো সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে অন্তত ২৫ শতাংশ মানুষ একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং তারা প্রচণ্ড রকম ভারতবিদ্বেষী।


পাশাপাশি সেখানে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের উসকানি রয়েছে। সেদিক থেকে তিনি বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত করেছেন এবং বলেছেন, এ কারণে যেকোনো সময় বাংলাদেশের রাজনীতি বদলে যেতে পারে। একই সঙ্গে তিনি ভারতীয় বিদ্রোহীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, একে তারা খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। একের রাজনৈতিক অবস্থা অন্যকে কমবেশি প্রভাবিত করতেই পারে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন হতেই পারেন। আমরা ধরে নিচ্ছি, ভারতের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে নিশ্চিত হয়েই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী এসব উক্তি করেছেন। কিন্তু বিষয়গুলো কতটুকু সত্য, সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে_তা দেশের নাগরিকদের জানার অধিকার রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য আশা করছি।
ঘর পোড়া গরু নাকি সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। বিগত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের যে ভয়াবহ বিস্তার এবং যে ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা আমরা দেখেছি_তাতে আমাদের অবস্থাও সেই ঘর পোড়া গরুর মতো। সারা দেশে একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিচারক, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অনেককেই প্রাণ দিতে হয়েছে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীদের হাতে। ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীরা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা বর্তমান পাকিস্তানের দিকে তাকালেও কিছুটা অনুমান করতে পারি। কাজেই আমরা চাই না, তেমন কোনো অশুভ শক্তি বাংলাদেশে আবার তাদের জঘন্য থাবা বিস্তারে সক্ষম হোক। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাটির এ ধরনের অপকর্ম দুনিয়াবিদিত। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছ থেকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপই আশা করি। আবার অযথা কেউ যেন আমাদের গায়ে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের লেবাস না চাপাতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
আমরা মনে করি, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের একটি ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। যদি সত্যিই কোনো সমস্যা থাকে তাহলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.