তড়িঘড়ি করে ডিসিসি ভাগ নয়-আরেকবার ভাবুন

ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) উত্তর-দক্ষিণে দুই ভাগ করার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তা নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ডিসিসির বিভক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান এই প্রস্তাবকে উদ্ভট চিন্তা বলে মন্তব্য করেছেন।
অনেকে একে মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ডিসিসির বিভক্তির বিরোধিতা করছেন এর বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলররাও। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ২৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার সমাবেশ করে তাঁরা নাগরিক সেবা বন্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন।
যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, তা হলো ডিসিসির বিভক্তির প্রয়োজন আছে কি না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঢাকা মহানগরের লোকসংখ্যা ও আয়তন বেড়ে যাওয়ায় একটি সংস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ঢাকার চেয়ে বেশি জনসংখ্যার শহর কি পৃথিবীতে নেই? সেসব শহর একক সংস্থা দিয়ে পরিচালিত হতে পারলে ডিসিসি পারবে না কেন? আর ডিসিসি ভাগ হলেই যে নাগরিকেরা সুযোগ-সুবিধা পাবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে। বাড়বে প্রশাসনিক ব্যয় ও জটিলতা।
গত বুধবার জাতীয় সংসদে ডিসিসিকে ভাগ করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধন বিল ২০১১ উত্থাপন করা হয়। আগামী সোমবার সংসদ অধিবেশনের শেষ দিন বিলটি পাস হওয়ার কথা। আমরা মনে করি, বিষয়টি দলীয় বা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা সমীচীন নয়। ডিসিসির বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলররা নগরবাসীর চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না, এটি তাঁদের ব্যর্থতা; প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নয়। সরকারের উচিত, বিভক্তির আইন না করে অবিলম্বে ডিসিসির নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
সরকার যদি সত্যিই নগরবাসীর সমস্যাগুলো সমাধান করতে চায়, তাহলে ডিসিসিকে বিভক্ত করার মাধ্যমে তা সম্ভব হবে না। প্রতিষ্ঠানটির এখতিয়ার, সামর্থ্য ও দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। নগরবাসীর সেবার খাতগুলোর ওপর এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ যে নগর সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা-ও পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। অতীতে সামরিক শাসকেরা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে অনেক গণবিরোধী আইন দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দিতেন। কিন্তু একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার কেন তেমন কাজ করবে? সরকার যে যুক্তিতে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে, সেই যুক্তিতে স্থানীয় সরকার সংস্থায় অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখাও বাঞ্ছনীয় নয়।
আমরা মনে করি, জনমত উপেক্ষা করে ডিসিসি ভাগ করার পরিণাম ভালো হবে না। এ নিয়ে তাড়াহুড়া করারও প্রয়োজন নেই। বিলটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুক। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুক। সর্বোপরি যাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান, সেই মহানগরের বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া একান্ত জরুরি। তাই প্রস্তাবিত বিলটি পাসের আগে আরেকবার ভাবুন।

No comments

Powered by Blogger.