ভুঁইফোড় আবাসন-প্রতারণার জাল ছিন্ন হোক

বাসস্থান মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা ও অধিকার। যাঁরা দেশের আবাসন খাতকে নানা রকম প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিকশিত করার নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন এবং মানুষের কাছে তাঁদের প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার পূরণে দায়বদ্ধ, তাঁরা একশ্রেণীর ভুঁইফোড় আবাসন ব্যবসায়ীর নীতিহীন কর্মকাণ্ডের কারণে নতুন করে সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এ বিষয়টি নানা কারণে খুব উদ্বেগজনক এবং দেশের অর্থনীতির জন্য অশুভ বার্তাবহ।
৩ জুলাই কালের কণ্ঠে 'পূর্বাচল ঘিরে ভুঁইফোড় আবাসন, রাজউক চুপ' শিরোনামে প্রকাশিত শীর্ষ সচিত্র প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে তাতে নতুন করে প্রতারণার বিষয়টি অধিকতর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার স্বর্ণখালী এলাকায় টঙ্গী-নরসিংদী সড়কের পাশে কয়েকটি ভুঁইফোড় আবাসন প্রকল্পের প্রতারণার ফাঁদের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ও জলাভূমিজুড়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের চোখে ধুলা দিয়ে কিভাবে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতা হলো, তা অবশ্যই বিস্ময়কর। শুধু সাইনবোর্ড বসানোর জমিটুকু কিনে অথবা ভাড়া নিয়ে যেসব ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে তথাকথিত প্লট বিক্রির ব্যবসা, তা কিভাবে চলছে এও একইভাবে আরো একটি প্রশ্ন।
রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদার বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাও বিস্ময়কর। এসব প্রকল্পের অনুমোদন নেই এমন বক্তব্য ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কারোর মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ার পরও কি বিষয়গুলো থেকে যাবে প্রতিকারহীন? দেশের আবাসন খাতের যাঁরা বিকাশ ঘটাতে সচেষ্ট তাঁরা এত প্রতিকূলতার পরও অন্তত কিছুসংখ্যক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছেন, এটি কম কথা নয়। কিন্তু এর পরও গোষ্ঠী বা মহলবিশেষের অপপ্রচার, নানামুখী চক্রান্ত এবং অব্যাহত ষড়যন্ত্রের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চলছে তাও এক অশুভবার্তা। প্রকৃতপক্ষে, যাঁরা এই খাতের জন্য এতকিছু করেছেন, তাঁরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনজর না পেলেও ওইসব ভুঁইফোড়রাই দাপটের সঙ্গে তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পারছে! একটা কথা অবশ্যই সত্য, আবাসন শিল্পের দায়বদ্ধ কিংবা প্রকৃত ব্যবসায়ী বা কর্ণধারদের উপেক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়ণের কল্পনা অলীক। মানুষের বাসস্থানের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায় হলেও এ ক্ষেত্রে বিরাজমান চিত্র অনুজ্জ্বল। সেখানে আবাসন শিল্পের নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল কর্ণধাররা যে পরিসরেই হোক সে কাজটি আন্তরিকতার সঙ্গে করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এসব আবাসন শিল্পে উত্তরোত্তর দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্তরা যুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের মেধা বিনিয়োগ করছেন। অথচ, এর বিপরীতে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ভুঁইফোড় আবাসন শিল্পের তথাকথিত ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা সীমাহীন পর্যায়ে পেঁৗছেছে। সার্বিক বিবেচনায় তা চরম উদ্বেগজনক বিষয়।
আমরা মনে করি, এ অবস্থা চলতে পারে না। অবৈধ প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে প্রতারণার জাল ক্রমেই যে বিস্তৃত হচ্ছে, এর দায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলো এড়াতে পারে না। যে সুযোগে ভুঁইফোড় আবাসন ব্যবসায়ীরা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছেন, সেসব ব্যাপারে মানুষের সচেতনতা এবং যথাযথ পর্যবেক্ষণবোধ বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষকে মনে রাখতে হবে, চোখধাঁধানো বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হওয়া আর প্রকৃত আবাসনের-নিশানা পাওয়া এক কথা নয়। এতটুকু বাসার জন্য একজন মানুষ তাঁর সারা জীবনের স্বপ্ন, সঞ্চয় বিনিয়োগ করে প্রতারিত হবেন, আর এর বিপরীতে সরকারের কিছুই করার থাকবে না, তা হতে পারে না। প্রতারণার জাল ছিন্ন করার দায় সর্বাগ্রে সরকারেরই।

No comments

Powered by Blogger.