রুবচিচের লক্ষ্য ৩০ ধাপ উন্নতি

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন ১৫২। আগামী এক বছর পর এই র‌্যাঙ্কিংটা ১২০-এর ঘরে দেখতে চান রবার্ট রুবচিচ। বাফুফের প্রধান কোচ হয়ে ঢাকায় আসার ঘণ্টা চারেক পরই সংবাদ সংম্মেলনে একরকম ঘোষণার সুরেই বলে দিলেন ক্রোয়েশিয়ান কোচ।
বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে গত কয়েক দিনে ইন্টারনেট ঘেঁটে পাওয়া কিছু ধারণা ছাড়া আর কিছুই তাঁর জানা নেই। তা হোক, এক বছরের চুক্তি শেষে বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান—প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসীই শোনায় কণ্ঠটা, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের যে ফিফা র‌্যাঙ্কিং আছে, এক বছরে তার চেয়ে ৩০ ধাপ ওপরে দেখতে চাইব।’
ভোরে বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় মতিঝিল বাফুফে ভবনে। সেখানে বাফুফে কর্মকর্তাদের পাশে বসে ক্রুসিয়ানি-ডিডোদের উত্তরসূরি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে প্রথমেই বললেন, ‘বাংলাদেশের কোচ হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। সবে তো এলাম, কয়েক দিন সময় দিন আমাকে।’
দেখতে অনেকটা আর্জেন্টাইন কোচ ক্রুসিয়ানির মতো। চাইলে কেউ কলেজের শিক্ষকও ভেবে নিতে পারেন। ক্রুসিয়ানির মতোই থেমে থেমে কথা বলেন। নিজেই হেসে বলেন, ‘ইংরেজিটা অত ভালো পারি না।’
প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে প্রশ্ন যায় আমিনুলদের নতুন কোচের দিকে, বাংলাদেশের প্রধান কোচ হওয়ার অনুভূতিটা কেমন? এই প্রথম কোনো জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা কেমন? পাশ থেকে প্রশ্নটা ভালোভাবে বুঝে নিয়ে তাঁর উত্তর, ‘এটা সহজ দায়িত্ব নয়। খুব কঠিন। তবে আমার অভিজ্ঞতা আছে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমার যোগাযোগটা ভালো। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি চাই, অবশ্যই শারীরিকভাবে ‘শক্তিশালী’ খেলোয়াড়।’
৪৭ ছুঁইছুঁই কোচের কোচিং-পদ্ধতি, কোচিং-দর্শন জানতে চাইলে আবারও প্রশ্ন বুঝিয়ে দিতে হলো ভালো করে। তাঁর কথা থেকে যতটুকু বোঝা গেল তা এ রকম, ‘আমি ফুটবল ভালোবাসি। আমি চাই, দ্রুতগতির আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে। ঠু মাচ রান...অ্যান্ড টেকনিক্যালি ভেরি গুড। আমার পছন্দের ফরমেশন ৪-২-৩-১।’
তাঁর জীবনপঞ্জিতে লেখা ওয়ার্ল্ড স্টার টিমের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন। কত সালে? কোথায়? কার সঙ্গে? প্রশ্ন বুঝতেই পারলেন না। জীবনবৃত্তান্তের কপি সামনে ধরে বোঝানোর পর বুঝলেন। তারপর স্মিত হাসি, ‘ও হো...ওয়ার্ল্ড স্টার টিম...। ১৯৯৫ সালে খেলেছিলাম ফ্রান্সে। বাতিস্তা-বেনিফিট ম্যাচ। তাফারেল, হুগো সানচেজদের সঙ্গে।’ ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলে একটি ম্যাচ, অবিভক্ত যুগোস্লাভিয়ার অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলেছেন বলেও এক ফাঁকে জানিয়ে দেন বাংলাদেশের ফুটবলে চতুর্দশ বিদেশি কোচ।
প্রিয় খেলোয়াড় কে ছিলেন? বড় কোনো তারকা নন, স্বদেশি ডেভর সুকারের নামটাই শুধু বললেন। এবারের বিশ্বকাপের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতনের কারণটাও জানালেন, ‘ওরা অতি-আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে সর্বনাশ করেছে নিজেদের। ক্রোয়েশিয়ার ঘরোয়া ফুটবলে এফসি রিয়েকার হয়ে খেলোয়াড়ি ও কোচিং জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটানো এই লেফট ব্যাকের মতে, ‘ট্যাকটিক্যালি সমস্যা ছিল দুই দলেরই।’
পেপ গার্দিওলা নাকি হোসে মরিনহো—কার কোচিং ভালো লাগে, জানতে চাইলে মরিনহোর নামটাই বলে যান বারবার। রিয়াল মাদ্রিদ কোচকে তাঁর প্রিয় কোচ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘তিনি ২৪ ঘণ্টাই ফুটবল নিয়ে ভাবেন।’ এই অঞ্চলে প্রথম আসায় বাড়তি চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন কি না—প্রশ্নের জবাবে চ্যালেঞ্জের ব্যাপারটা সহাস্যেই কবুল করে নেন ছয় বছর বয়সী একমাত্র সন্তানের জনক, ‘এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ তো বটেই।’
এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতিরত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে নতুন কোচকে সংবাদ সম্মেলন শেষে নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপিতে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে শুধুই পরিচিত হয়েছেন প্রথম দিনে, ক্যাম্পের খেলোয়াড় নিয়ে আয়োজিত একটা ম্যাচ দেখে ঢাকায় ফিরেছেন। ঈদের ছুটির পর দল নিয়ে কাজ করবেন রুবচিচ।
বাফুফের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান বাদল রায় সংবাদ সম্মেলনের ইতি টেনে বললেন, ‘আজ আমাদের জন্য বিশেষ একটা দিন। আমাদের উচিত হবে এই উঁচুমানের লোকটাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখা। আমাদের ভুলে তিনি যেন চলে না যান, সে দিকটি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
বিদেশি কোচ এলে শুরুটা হয় এমন আশা-জাগানিয়া। কিন্তু শেষটা? দুই পক্ষের তিক্ততায় ভরা। রুবচিচ এর সঙ্গে পরিচিত না হলেই ভালো!

No comments

Powered by Blogger.