ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চাই: চীন

চীন বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় দেশটি ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চায়।
‘চীন এশিয়ায় আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই এ ব্যাপারে ভারতের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।’ গত মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এই উক্তির জবাবে গতকাল বুধবার দেশটি তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
চীন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি জায়গা করে নিতে চাইছে—টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত মনমোহনের এই মন্তব্য ব্যাখ্যা করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়াং ইউ বলেন, চীন দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতসহ এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর স্বার্থে কাজ করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘অভিন্ন উন্নয়ন ইস্যুতে চীন ও ভারত একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও উন্নত দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চাই।’
ভারত ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলেও কাশ্মীর সীমান্ত নিয়ে বিরোধ অমীমাংসিত থাকায় দেশ দুটির মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত চীন সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মন্তব্য এই সম্পর্ককে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মনমোহন বলেন, ‘চীন দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। আর এ ক্ষেত্রে দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরকে ব্যবহার করতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘দেশটি কোন পথে এগোবে, তা বোঝা খুবই কঠিন। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
ভারত ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে গত মঙ্গলবার রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, চীন গত মাসে ভারতের এক জেনারেলকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ওই জেনারেল বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর এলাকায় কর্মরত। এ ঘটনায় দিল্লি চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ছিন্ন করে। একটি প্রতিরক্ষা সূত্র ও স্থানীয় গণমাধ্যম এ কথা জানায়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬২ সালে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর উভয় দেশের সীমান্তের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন থেকে সামরিক কর্মকর্তাদের যাতায়াতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বেইজিং দশকের পর দশক ধরে কাশ্মীরে ঢিলেঢালা নিরাপত্তা বজায় রাখলেও ভারত সেখানে ২০ বছর ধরে চলা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের জন্য নয়াদিল্লি বরাবর পাকিস্তানকে দায়ী করে থাকে।
ভারত কাশ্মীরকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে আসছে। এ রকম একটি অঞ্চলকে বিরোধপূর্ণ বলা যেকোনো বিদেশি শক্তির কাছে সত্যিই একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ অঞ্চলকে পাকিস্তানও নিজেদের বলে দাবি করে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি চীনের উদ্বেগের একটি কারণ। অনেক বিশ্লেষক ২০০৮ সালে সম্পাদিত ওই বেসামরিক পরমাণু চুক্তিকে এই দুটি দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। ওই চুক্তির মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভারতের পরমাণু অচলাবস্থা কেটে যায়। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বেইজিং পাকিস্তানকে একটি নতুন পরমাণু চুল্লি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চীন-ভারত উভয়ই নিজেদের বিকাশমান অর্থনীতি জোরদার করে তুলতে বর্তমানে জ্বালানির মতো বৈশ্বিক সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.