পবিত্র ঈদুল ফিতর -শুভবোধের চর্চা সঞ্চারিত হোক সবার জীবনযাপনে

বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদ উৎসব—শান্তি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে। এই আনন্দে সবাই শামিল। ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সবাই কোনো না কোনোভাবে এ আনন্দের ভাগিদার হয়। ঘরে-বাইরে, সর্বত্র আমরা উৎসবমুখরতা অনুভব করতে পারছি। ঈদের এই আনন্দ আমরা ভাগ করে নিতে চাই আমাদের প্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্টসহ সব শুভানুধ্যায়ীর সঙ্গে। সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ঈদের এই আয়োজন তো জীবনেরই উদ্যাপন, জীবনকে নতুন করে রাঙানোর উৎসব। সব সংকীর্ণতা ও ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের আপন হয়ে ওঠা, পরস্পরের সৎ প্রতিবেশী হয়ে ওঠার এক মহান উপলক্ষ ঈদ। ঈদের আগমনী সুরেও বেজে চলেছে মানুষে মানুষে মিলনের এই আকুতি। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের প্রতিবেশীদের নিয়ে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
উৎসবের সঙ্গে শান্তির গভীর যোগসূত্র আছে। শান্তির কমতি থাকলে উৎসবের আনন্দেও ভাটা পড়ে। এবার সব দিকে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত—অর্থনীতি অনেকটাই জীবন্ত, রাজনৈতিক উত্তেজনা তেমন নেই; সংঘাত, সহিংসতা কমেছে। পেশাদারি অপরাধ এবং ঈদের আগে চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য কম থাকায় মানুষ স্বস্তিতে আছে। অপেক্ষাকৃত শান্তির পরিবেশে ঈদ উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে?
তবে আমাদের দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে বৈষম্য প্রকটতর হচ্ছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের অনেকটাই যখন অবাস্তবায়িত থেকে যাচ্ছে, তখন ঈদের আনন্দ সর্বজনীন হওয়ার পথে বড় বাধা থেকে যায়। দুঃখজনক হলো, বেসরকারি শিক্ষক ও পোশাকশ্রমিকদের অনেকে তাঁদের বেতন-বোনাস পাননি। ব্যবস্থাপনাগত নানা দুর্বলতা কাটিয়ে সবার জন্য ঈদ উৎসবকে সমান আনন্দময় করে তোলার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের আরও সচেষ্ট হওয়া দরকার।
যে ঐক্য ও শান্তি আমরা উৎসবের দিনগুলোয় দেখাতে পারি, তাকে কেন নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত করতে পারব না? যদি ছোট পরিসরে পারি, তো বড় পরিসরে, জাতীয় জীবনে একই আচরণ করতে না পারার তো কোনো কারণ থাকতে পারে না। ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে শুভবোধের চর্চার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে—সেটাই প্রত্যাশা।
ঈদ নিছক উৎসব নয়, জীবনকে নবায়ন করার আহ্বান, উৎসে ফেরার ডাক। ঈদে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে আকুল হয়, শহরবাসী গ্রামে ফেরায় রোমাঞ্চ পায়, একাকী মানুষ বন্ধুমহলের সঙ্গে মেলার জন্য ব্যাকুল হয়। অনেক ভোগান্তি শেষে নিজ প্রাঙ্গণে প্রিয়জনের আলিঙ্গনের সুখ উপভোগ করে। দেশের মানুষ তখন ‘দেশের’ মানুষের সঙ্গে মিলিত হয়। এই সুযোগ থেকে কেউই যাতে বঞ্চিত না হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.