সিলেট নগরে ফের নির্বাচনী হাওয়া: মাঠে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা by ওয়েছ খছরু

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ফের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজে গতি বাড়িয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অসুস্থতা সেরে মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও। খালেদা জিয়ার কারান্তরীণ হওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আলোচনা প্রায় মিইয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের পর ফের আড়মোড়া ভেঙে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন সিলেটের প্রার্থীরা। শুধু যে মেয়র প্রার্থীরা তা নয়, পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী দাওয়াতে নেমেছেন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। ভোটারদের কাছ থেকে তারা দোয়া নিতে ব্যস্ত। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি চাইবে তাদের মসনদ টিকিয়ে রাখতে। আর আওয়ামী লীগ চাইছে তাদের হারানো সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে। ফলে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এবার আগে থেকেই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে হয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই নির্বাচনের প্রায় তিন মাস পর সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পরিষদটি। তাদের মেয়াদ আগামী সেপ্টেম্বরেই শেষ হতে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে আগামী জুলাইয়ে হতে পারে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। রমজানের পরপরই ভোটপ্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে আর হাতে সময় বেশি নেই। আর তাই এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বিএনপি দলীয় মেয়র। গত নির্বাচনে তিনি পরাজিত করেছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল থেকে ইতিমধ্যে কামরানকে মেয়র পদে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। যদিও চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বোর্ডের বৈঠকে। গত নির্বাচনে পরাজয়বরণ করলেও মাঠ ছাড়েননি কামরান। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকছেন। যেখানেই ডাক পড়ছে তিনি ছুটে চলেছেন। পাশাপাশি দলেরও শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সিলেটে দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রয়েছেন। জনগণের কাছাকাছি থাকায় কামরান সিলেটের ভোটের মাঠে বড় ফ্যাক্টর। গেলো দুই মাস ধরে অসুস্থতায় কাবু কামরান। তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় তিনটি রিং প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ বিশ্রামের পর গত দুই দিন থেকে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন। কামরান ছাড়াও এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আরও দুই প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। তারাও কেন্দ্রের কাছে মেয়র পদের জন্য জোর লবিং চালাচ্ছেন। এদিকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনকে সামনে রেখে তার কর্মকাণ্ডে গতি বাড়িয়েছেন। তিনি নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা দূরীকরণকে চ্যালেঞ্জ মনে করে প্রতিদিনই ছুটছেন। পাশাপাশি ফোর লেনের রাস্তা করছেন সিলেটে। এক্ষেত্রে তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও সহায়তা পাচ্ছেন। আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি দলীয় মেয়র হওয়ার পরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকার থেকে টাকা পেয়েছেন। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হয়ে ২৭ মাস কারাগারে থাকায় তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রাখতে পারেননি। প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি কারাগারের বাইরে রয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন কাজ শেষ করতে চাচ্ছেন। এখন প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আরিফুল হক চৌধুরী নগরবাসীর সেবায় সময় দিচ্ছেন। এর পরও নিজ দলের ভেতরে স্বস্তিতে নেই আরিফুল হক চৌধুরী। তার সঙ্গে মনোনয়ন লড়াইয়ে দলের ভেতর থেকে নামছেন একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, কেন্দ্রীয় সহস্বেচ্ছা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি, বর্তমান প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদি। দলের ভেতরে তাদের প্রত্যেকেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তবে নাসিম হোসাইন এবার আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে নামছেন। তিনি দল থেকে মনোনয়ন পেতে অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রের কাছে লবিং চালাচ্ছেন। গেলবার নাসিম হোসাইন আরিফকে ছাড় দিয়েছিলেন। এবার তিনি নির্বাচন করবেনই- এমন মনোভাব তার। নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট মহানগর বিএনপি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সিলেট মহানগর ২৭ ওয়ার্ডে বিএনপির পক্ষ থেকে সভা করা হচ্ছে। এসব সভায় সেন্টার কমিটি গঠন ও ওয়ার্ডের বিএনপি দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএনপি সূত্র। এবার বিএনপি চাইছে সবার মতামত নিয়ে তারা ২৭ ওয়ার্ডে বিএনপি দলীয় ২৭ কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে। দলের প্রার্থীদের জয় অনেকটা সহজ করতে তারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সিলেটে এবার বিএনপির সমর্থন চাচ্ছেন গেলো দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যুবদল নেতা সালাহউদ্দিন রিমন। তিনি দলের হাইকমান্ডের কাছে এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। রিমন জানিয়েছেন, তিনি এবার দলের মনোনয়নের জন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থীর নাম আগে থেকেই ঘোষণা করেছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হচ্ছেন দলের মহানগরের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি ইতিমধ্যে নির্বাচনী কাজ শুরু করেছেন। কয়েকটি পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করেছেন। জাতীয় পার্টির সমর্থন চাচ্ছেন সিলেটের শীর্ষ নেতা আব্দুস সামাদ নজরুল। ইতিমধ্যে দলীয় হাইকমান্ডের কাছেও তিনি সমর্থন চেয়েছেন। সিলেটের পাড়া-মহল্লায় ভোটের হাওয়া জোরেশোরে বইছে। সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা পাড়া মহল্লায় ইতিমধ্যে সাটিয়ে দিয়েছেন ব্যানার ফেস্টুন। তবে এবার বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছেন সিলেটের কয়েকজন সিনিয়র কাউন্সিলর। দীর্ঘ দিন ধরে নিজ এলাকায় কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন জমি ব্যবসায়। কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণেও বিতর্কিত হয়েছেন। আবার এলাকার সন্ত্রাসী লালনের অভিযোগও উঠেছে কারও কারও বিরুদ্ধে। ফলে তাদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অসন্তুষ বিরাজ করছে। ওই সব এলাকায় নতুন প্রার্থীরা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এখন থেকেই মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন।

No comments

Powered by Blogger.