নির্বাচন নিয়ে পুতিনের চিন্তা নেই

রুশ জনগণ আজ রোববার তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিনসহ আরও সাতজন প্রার্থী এ নির্বাচনে লড়ছেন। নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক মাস আগেও অন্যান্য প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও পুতিনের ক্ষেত্রে সেরকম কোনো কিছু দেখা যায়নি। জোরালো কোনো নির্বাচনী প্রচারণা চালাননি তিনি। নির্বাচনে অন্যসব প্রার্থী যেমন নির্বাচনী ইসতেহার দিয়েছেন, তেমন কোনো ইসতেহার দেননি তিনি। এ ক্ষেত্রে তাকে ব্যতিক্রমী বলতেই হয়। আর নির্বাচন নিয়ে কেনইবা চিন্তা করবেন তিনি। গত ১৮ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় তিনি। আজকের নির্বাচনেও তার বিজয় অনেকটা নিশ্চিত বলতে হবে। এ জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেই রেখেছেন তিনি। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী সবই তার ইশারায় চলে। নির্বাচনের মাঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ভোটার তাদের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। এক নির্বাচনী জরিপ মতে, প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন পুতিন। সোভিয়েত উত্তরকালে ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত রাশিয়ার ক্ষমতায় আসেন পুতিন। রুশ সংবিধানে একটা দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকার বিধান না থাকায় ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। নিজের রাজনৈতিক সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভকে করেন প্রেসিডেন্ট। ২০১২ সালের নির্বাচনে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। এভাবে প্রায় দুই দশক ধরে ক্ষমতায় তিনি। বিশাল এ সময় ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি পুতিন নিজেকে সোভিয়েত-পরবর্তী সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। রাশিয়ার জনগণ এখন তাকে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবেই দেখে। তাদের চোখে তিনি এমন একজন নেতা যিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্বদরবারে রাশিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজকের নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা স্লোগান নিয়েই পুতিন এগিয়েছেন। আর সেটা হচ্ছে, ‘একজন শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট, এক শক্তিশালী রাশিয়া।’
আলজাজিরা জানিয়েছে, এ নির্বাচনে আরও সাতজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছেন পুতিন। পুতিন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে কট্টর জাতীয়তাবাদী ভ­াদিমির ঝিরিনোভস্কি এবং গ্রিগরি ইয়াভলিনস্কি এর আগেও পুতিনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। রয়েছেন সাবেক রিয়েলিটি শো উপস্থাপক সেনিয়া সবচাক। তবে তাদের কেউ ৮ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না বলে জরিপে বলা হয়েছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পুতিনের প্রধান বিরোধী হয়ে ওঠেন দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলেক্সাই নালালনি। দুর্নীতির অভিযোগেই নির্বাচন থেকে তাকে দূরে রেখে নিজের জয়ের পথ নিরঙ্কুশ করেছেন পুতিন। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সের্গেই বাবুরিন। কট্টর জাতীয়তাবাদী রাশিয়ান অল-পিপলস ইউনিয়নের প্রধান তিনি। রয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রার্থী পাভেল গ্র“দিনিন, স্ট্যালিনপন্থী কমিউনিস্ট অব রাশিয়া পার্টির নেতা ম্যাক্সিম সুরাইকিন ও ধনকুবের ব্যবসায়ী বোরিস টিটোভ। তবে এদের কারো নিয়েই পুতিনের চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ এ প্রার্থীদের কেউই ১ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না। তবে নির্বাচন নিয়ে পুতিনের কোনো চিন্তা না থাকলেও তার ব্যাপারে চিন্তিত গোটা বিশ্ব। কারণ একটানা ১৮ বছর রাশিয়া শাসন করছেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মতোই আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন পুতিন।

No comments

Powered by Blogger.