লাশের প্রতীক্ষায় শশীর বাবা-মা by রিপন আনসারী

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় আহত ডা. রেজাওয়ানুল হক শাওন এখনো জানেন না তার প্রিয়তমা স্ত্রী শশী এ পৃথিবীতে আর নেই। সমস্ত ভালোবাসা আর সংসারের মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। শাওনকে বলা হয়েছে শশীকে অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর শাওনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুদিন আগে নেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে। এছাড়া তাহিয়া শশীর লাশের প্রতীক্ষায় রয়েছে তার বাবা-মা, শোকে কাঁদছেন তারা।
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার লঞ্চঘাট এলাকার ডা. রেজা জামানের একমাত্র মেয়ে শশী। শশী ছাড়া তার আর কোনো সন্তান নেই। ফলে একমাত্র আদরের মেয়েকে হারিয়ে কাঁদছেন বাবা-মা। থামছে না তাদের এ কান্না। প্রতীক্ষায় রয়েছেন কখন শশীর মরদেহ আসবে। বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ শশীর মুখখানি এক নজর দেখবে। এ আশায় রাত-দিন চোখে পানি ঝরছে। এছাড়া লাশের অপেক্ষায় আছেন শশীর আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া- প্রতিবেশীসহ মানিকগঞ্জ শহরের মানুষজনও।
ডা. রেজাওয়ানুল হক শাওনের মামা আইনজীবী আসাদুজ্জামান আসাদ শনিবার সকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিমান দুর্ঘটনায় শশী মারা গেছে এ খবর এখনো তার ভাগ্নে ডা. শাওনকে জানানো হয়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার স্ত্রীর মৃত্যু সম্পর্কে এই মুহূর্তে তাকে কিছু জানানো যাবে না। সে কারণেই শাওন এখনো জানেন না শশী মারা গেছেন। বলা হয়েছে, শশী ভালো আছে। সে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া দুদিন আগে শাওনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
আসাদুজ্জামান আসাদ আরো জানিয়েছেন, শশীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে তার বাবা-মা একে বারেই ভেঙে পড়েছেন। সব সময়ই মেয়ের শোকে কাঁদছেন। বাবা ঢাকার বাড়িতে আছেন। শশীর মরদেহ দেশে আসার পর মানিকগঞ্জে আনা হবে। মানিকগঞ্জ শহরের সেওতা কবরস্থানে তার লাশ দাফন হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়েছে।
শশী ও শাওন। বিমান দুর্ঘটনায় ৬ বছরের সুখের সংসারের ইতি টানেন এই দম্পতি। শাওনকে একা করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন শশী। জানা গেছে এই মাসেই তাদের সপ্তম বিবাহ বার্ষিকী। আর এই উৎসবটা পালন করার কথা ছিল নেপালের কাঠমান্ডুতে। সেজন্যই শশী তার স্বামী ডা. শাওনকে নিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানে ঢাকা থেকে রওনা হন। কিন্তু সেদিন তাদের আর নেপালের কাঠমান্ডুতে যাওয়া হয়নি। তার আগেই সমস্ত স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। তাদের বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হলে স্বামীর ভালোবাসা ছিন্ন করে শশী চলে যায় না ফেরার দেশে। আর ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া শাওন হয়ে পড়েছেন শশীবিহীন।
দুজনের আদি ঠিকানা মানিকগঞ্জে। শশী মানিকগঞ্জ শহরের মেয়ে আর শাওন জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ছেলে।

No comments

Powered by Blogger.