অস্ট্রেলিয়ায় সুচি, মানবাধিকারকর্মীদের প্রতিবাদ

একদিকে মানবাধিকার কর্মীদের প্রতিবাদ, আইনজীবীরা বিচার চেয়ে আবেদন, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ ‘অস্ট্রেলিয়া-আসিয়ান’ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি সিডনি পৌঁছেছেন। সেখানে তার উপস্থিতিকে দেখা হচ্ছে হারানো আশাকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়া হিসেবে। এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)-এর নয়জন নেতা এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন কম্বোডিয়ার ‘স্ট্রংম্যান’ হিসেবে পরিচিত হুন সেন ও ভিয়েতনামের নগুয়েন সুয়ান ফুক। এ দু’জনও নিষ্পেষণ চালানোর দায়ে অভিযুক্ত। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে কয়েকজন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। তাদের একজন কবির আহমেদ। তিনি ২০১৩ সালে শতাধিক মানুষ বোঝাই একটি বোটে করে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছেন। তাকে জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা ছুটে বেড়াতে হয়েছে। তাই তার আটটি সন্তানের জন্ম হয়েছে এক এক দেশে। কেউ জন্মেছেন মিয়ানমারে। কেউ মালয়েশিয়া বা অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু জন্ম নিলেও কোনো দেশেরই নাগরিক হতে পারেন নি তিনি বা তার সন্তানরা। এখন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ছোট্ট একটি গ্রুপের সঙ্গে বসবাস করেন তিনি। চালান একটি মুদি দোকানি। কবির আহমেদ বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী কঠোর কৌশল অবলম্বন করে। এই সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সেনাদের মতো নয়। তারা কোনো কারণ ছাড়াই মানুষ হত্যা করে। তার মতে, অং সান সুচি ক্ষমতায় আসার আগে মিয়ানমারের পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। আমাদেরকে কাজ করতে দেয়া হতো না। স্বাধীনভাবে চলতে দেয়া হচ্ছে না। তারপরও আমাদেরকে নির্যাতন করা হতো। আমাদের ওপর থাকতো তাদের কড়া নজরদারি। তবুও অন্তত সেখানে বসবাস করতে পারতাম আমরা। কিন্তু সুচি ক্ষমতায় আসার পর আমাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ওদিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বা জাতি নিধনে অং সান সুচি নিষ্ক্রিয় থাকায় তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে সারাবিশ্ব থেকে। অস্ট্রেলিয়ার কিছু আইনজীবী সুচির বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে বিচার চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দেশটি রোববার সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। আইনজীবীদের ওই আবেদনের জবাবে অস্ট্রেলিয়ার এটর্নি জেনারেল বলেছেন, সুচি দায়মুক্তির সুবিধা পান। মিয়ানমারের জটিল রাজনৈতিক হিসাবের অধীনে এখনও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। কিন্তু তাদের কারণেই অং সান সুচিকে সারাবিশ্বের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। গত বছর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ফলে তাদের ওপর কড়া চাপ রয়েছে, যাতে তারা মিয়ানমার ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। সিডনি সম্মেলনে মানবাধিকার ইস্যুতে জোর দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। তবে মানবাধিকার ইস্যুটি যদি তোলাও হয় বা আলোচনা হয় তা হবে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। প্রকাশ্যে নয়। ফলে মিয়ানমার ইস্যুতে লজ্জাজনক নীরবতা অবলম্বনের কারণে আসিয়ান নেতাদের অভিযুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত অঞ্চলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক জেমস গোমেজ বলেছেন, আঞ্চলিক প্রতিবেশী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও আসিয়ানের অবশ্যই মিয়ানমারের প্রতি একটি বার্তা দেয়া উচিত। তা হলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ গ্রহণযোগ্য নয। এমন অপরাধ শাস্তি ছাড়া ছেড়ে দেয়া হবে না।

No comments

Powered by Blogger.