প্রযুক্তি সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে by ফাহিম আহমেদ

প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। দেশে নিয়মিত বিরতিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সেবা। তবে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তির নিশ্চয়তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক। বলা যায়, এসডিজি অর্জনের অক্সিজেন হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। সার্বজনীন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারলে কোনো প্রকল্পেরই শতভাগ সাফল্য লাভ সম্ভব নয়। কিন্তু প্রযুক্তি ও সেবা কি আমরা প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি? অধিকাংশ প্রযুক্তি সেবাই সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারছে না। প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও শহুরে মানুষজনই শুধু ভোগ করতে পারছে, গ্রামের সাধারণ মানুষ নয়। প্রযুক্তি সেবা বিতরণের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় শহরের তুলনায় গ্রামের সাধারণ মানুষ অপেক্ষাকৃত অবহেলিত। অধিকাংশ পরিকল্পনা নগর বা শহরকেন্দ্রিক হওয়ার কারণেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নগর ও গ্রামকে সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তি প্রসারের বা প্রযুক্তি সেবা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। পল্লী অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী উৎপাদিত কুটির ও কৃষিজ পণ্যের বাজার দেশ-বিদেশে সম্প্রসারণের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয় ই-শপ কর্মসূচি। একইসঙ্গে এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা। উপজেলা পর্যায়ে ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং সারা দেশে বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন ইউনিয়নে ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব। প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজে নিয়োজিত। আমরা কতটুকু কৃষির আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে পেরেছি?
আর যতটুকুই পেরেছি সেটাও প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ যথাযথ ও কার্যকর উদ্যোগের অভাব। এ লক্ষ্যে সাফল্য পেতে হলে সরকারি-বেসরকারি, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে। কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) তরঙ্গের নিলাম। অথচ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে এখনও তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি-জি) ইন্টারনেট সেবাই পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ এখনও দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত। অভিযোগ রয়েছে, ফোর-জি সিম প্রতিস্থাপনের জন্য অপারেটরগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করছে অতিরিক্ত অর্থ। তারা বলছে, এনবিআরের নির্দেশনা অনুযয়ী সিম প্রতিস্থাপন কর বাবদ এই অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশ্লেষকদের মতামত হল, যেসব গ্রাহক ফোর-জি ব্যবহারের জন্য সিম বদলাচ্ছেন তারা ইতিমধ্যেই সব ধরনের কর দিয়েছেন। এতে করে সিমের মালিকানাও পরিবর্তন হচ্ছে না। একই ব্যবহারকারী শুধু পুরনো প্রযুক্তি থেকে নতুন প্রযুক্তির সেবা নিতে সিমটি বদলাচ্ছেন। এজন্য প্রতিস্থাপন বাবদ ১০০ টাকা কর আদায় অযৌক্তিক। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। যদি উন্নয়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে নিশ্চিত করা যাবে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তাসহ আরও বিভিন্ন দিক এবং সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে রূপকল্প-২০২১। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার সব প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
ফাহিম আহমেদ : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.