সন্তানকে উদ্ধার করতে গিয়ে আর ফিরেনি প্রিয়ক by মহিউদ্দিন অদুল

ফারুক হাসান প্রিয়ক। সৌখিন ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফার। তার ছবির মূল উপজীব্য ছিল প্রকৃতি ও শিশু। তাই প্রকৃতির কাছে, পর্বতের কাছে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে নেন স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি ও শিশু সন্তান তামাররা প্রিয়ন্ময়ীকে। তাদের সঙ্গে ছিল মামাতো ভাই মাসুম ও তার স্ত্রী স্বর্ণা। সঙ্গী হয় তার ক্যামেরা-লেন্সও। বিমান দুর্ঘটনায় একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও পাড়ি জমান পরপারে। আর স্ত্রী এ্যানি আহত হয়ে নেপাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমানটি অবতরণের সময় ছিটকে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। স্ত্রী এ্যানিকে নিয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। সরে গিয়েছিলেন নিরাপদ দূরত্বেও। কিন্তু একমাত্র সন্তানকে উদ্ধার করতে ছুটে যান তিনি। এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া। আর ফেরেননি। আর স্ত্রী এ্যানি বেঁচে গেলেও প্রিয়কের ভবিষ্যৎ বংশকে এগিয়ে নিতে পৃথিবীতে আর কেউ রইলো না। স্ত্রী এ্যানি ও মা ফিরোজা আক্তার ছাড়া প্রিয়কের সংসারে আর কেউ নেই। শুক্রবার রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ্যানিকে গ্রহণ করতে আসা প্রিয়কের জ্যাঠাতো ভাই লুৎফুর রহমান এসব কথা জানান। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমার ভাই প্রিয়ক ছিল সৌখিন ফটোগ্রাফার। প্রকৃতি ও শিশুর ছবি তোলে সে কয়েকটা পুরস্কারও জিতেছিল। লুৎফর বলেন, এ্যানি তাদের জানিয়েছে ‘বিমান বিধ্বস্তের পর প্রিয়ক ও এ্যানি দুজনেই নিরাপদে সরে যেতে পেরেছিলেন। আবার সন্তানকে উদ্ধারের জন্য গিয়েই সে আগুনের কবলে পড়েন।’ অবশ্য প্রিয়কের মৃত্যুর বিষয়টি এখনো এ্যানিকে জানানো হয়নি। তাকে জানানো হয়েছে স্বামী-সন্তানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়েছে।

জানা যায়, প্রিয়কের বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের জৈনবাজারের নগরহাওলা গ্রামে। তার পিতা শরাফত আলী পদস্থ সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তার ছিল কাঠের ব্যবসাও। এলাকার প্রথম ডুপ্লেক্স বাড়ি তারই। ২০১১ সালে ছেলে প্রিয়কের সঙ্গে বিয়ে দেন এ্যানিকে। পরের বছর ২০১২ সালে মারা যান শরাফত আলী। রেখে যান স্ত্রী ফিরোজা আক্তার, একমাত্র সন্তান প্রিয়ক ও তার স্ত্রী এ্যানিকে। পরে একমাত্র সন্তানের কোলে আসে তামাররা প্রিয়ন্ময়ী। প্রিয়ন্ময়ীর বয়স হয়েছিল সাড়ে তিন বছর। কিন্তু নেপালে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ হারান পিতা-কন্যা। এখন তার আর কোনো প্রজন্মই রইলো না শরাফতের রেখে যাওয়া সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে। এখনো ফিরেনি পিতা-কন্যার লাশও। তাদের লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন তার জ্যাঠাতো ভাইবোনেরা।

অপরদিকে শরাফতরা ছিলেন দুই ভাই। তার বড় ভাই খোরশেদ আলী এখনো জীবিত। খোরশেদের ৫ ছেলে ও ৩ বোনও জীবিত। প্রিয়কের চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে রয়েছে নাসিমা খাতুন, হাসনা বেগম, লুৎফুর রহমান, আতাউর রহমান, মাসুদ মিয়া, জ্যোৎস্না বেগম, মাজহারুল ইসলাম এবং মাহফুজুর রহমান। কিন্তু তাদের চাচার পরবর্তী প্রজন্মে তার আর কেউ না থাকায় শোকে মুহ্যমান লুৎফুর ও তার ভাইবোনেরা।

No comments

Powered by Blogger.