সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় প্রোফাইলে প্রোফাইলে আশরাফের ছবি by আশরাফুল ইসলাম

হঠাৎ করে সৈয়দ আশরাফকে এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় হতবাক কিশোরগঞ্জবাসী। এ ঘটনায় দলমত নির্বিশেষে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সৈয়দ আশরাফের সমর্থনে ফেসবুকে ‘জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সমর্থক গোষ্ঠী’সহ বিভিন্ন নামে খোলা হয়েছে একাধিক ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ। এসব গ্রুপ ও পেজে লাইক, শেয়ার, কমেন্টস ও মেম্বার সংখ্যা প্রতিমুহূর্তে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। অনেক ফেসবুক ইউজার প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করছেন সৈয়দ আশরাফের ছবি। নানা ভঙ্গিমায় সৈয়দ আশরাফের বিভিন্ন ছবি এখন শোভা পাচ্ছে ফেসবুকের প্রোফাইলে প্রোফাইলে। এর বাইরেও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাসসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। সেসব প্রতিক্রিয়ায় কিশোরগঞ্জবাসী তাদের ক্ষোভ, হতাশা ও বেদনার কথা তুলে ধরেছেন।
প্রথম আলোর ভৈরবের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দপ্তর হারাচ্ছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পেশাগত প্রয়োজনে টানা তিনদিন কিশোরগঞ্জে যেতে হয়েছে। দুইদিন সৈয়দ আশরাফের কাছাকাছি ছিলাম। চলমান ইস্যুতে তার কাছ থেকে খোলামেলা মন্তব্য না পাওয়ায় গণমাধ্যম কর্মীরা হতাশ ছিলেন। আমিও ছিলাম। কিন্তু আমি হবাক হয়েছি, যখন শুনেছি জেলা শহরে সৈয়দ আশরাফের কোন বাড়ি নেই। কিশোরগঞ্জ এলে চাচার বাড়িতে ওঠেন। চাচার বাড়ি গিয়ে দেখলাম, ওই বাড়িটিও অতি সাদামাটা। সামনের টিনশেডের ঘরটি ভেঙে পড়ছে প্রায়। পাকা ভবনটিও রঙ করা হয় না অনেকদিন। নেই দামি আসবাবও। অথচ স্বাধীনতার আগ থেকে তারা রাজনৈতিক পরিবার। তার বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। বিষয়টি যখনই ভাবনায় আসে, তখনই ভাবতে ভাল লাগে। কলাম লেখক গাজী মহিবুর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সৈয়দ আশরাফের মন্ত্রণালয় হারানোর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কিশোরগঞ্জের একজন বোদ্ধা বলছিলেন, সৈয়দ আশরাফ আত্মহত্যা করেছেন। আরেকজন বলেছেন, একজন মানুষ খুব সৎ কিন্তু তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে উদাসীন। তার কি সেই দায়িত্বে থাকা উচিত? অনেক সাংবাদিক ভাই নানান তথ্য-উপাত্ত দিয়ে লিখেছেন, আশরাফ সাহেব এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিগত ছয় বছরে মাত্র ২৫/৩০ দিন অফিস করেছেন। অনেকে লিখেছেন অফিসের ফাইল বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে আনতে হয়। এ ধরনের হাজারও অভিযোগ এখন শোনা যাচ্ছে সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে। সবই ধরে নিলাম সত্য। কিন্তু সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দিলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? পচা গম কি খাবার উপযোগী হয়ে যাবে? আশরাফ সাহেব না হয় একটু আরামপ্রিয় মানুষ বলে বাসায় ঘুমান অনেক বেলা পর্যন্ত কিন্তু মন্ত্রিসভার যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঘুমান সম্মানিত অতিথির চেয়ারে বসে... তাদের কি কিছু হবে? কিশোরগঞ্জের চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় একটু হলেও আহত হয়েছি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে।
মিজানুর রহমান নামে ফেসবুক ইউজার তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ত্যাগীরা, বিশ্বস্তরা যুগে যুগেই নিগৃহীত হয়। আবারও প্রমাণিত হলো। নতুন যুগের মীরজাফরদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফ? সাহেবকে দূরে সরিয়ে দিলেন। যেমনটি হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বাসঘাতক মোশ্‌তাকদের কানপড়ায়। পরবর্তীতে এই বেঈমানরাই ধ্বংস করে মুজিব পরিবারকে, আর এই ঘাতকদের সঙ্গে হাত মিলায়নি বলে জীবন দিতে হয়েছে শহীদ সৈয়দ নরুলসহ জাতীয় চার নেতাকে। আজ আমরা আশঙ্কা করছি যে, দলে নতুন কোন মোশ্‌তাকের আবির্ভাব হয়েছে। সে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে, যা এই চক্রান্তকারীর প্রথম বিজয়। শেখ হাসিনা হয়তো এখন বুঝতে পারবেন না। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার কিংবা দলের কোন বিপর্যয় এলে এই আশরাফ ভাই, এরাই জীবন বাজি রেখে হলেও আপনার পাশে থাকবে। জয় বাংলা...।
হোসেইন হিমেল নামে এক ফেসবুক ইউজার লিখেছেন, আমাদের কিশোরগঞ্জ রত্ন উপহার দেয় দেশকে। দুর্নীতিবাজ, স্বার্থান্বেষী কোন নেতা আমাদের ঘর থেকে যায় না। আমাদের এলাকার সন্তানরা দেশকে সারাজীবন দিয়েই গেলেন। বর্তমানে তার জ্বলন্ত উদাহরণ সৈয়দ আশরাফ সাহেব। উনি না থাকলে আজকে আওয়ামী লীগের এত সুসময়ের মুখ দেখা কবেই স্বপ্ন পর্যন্তই থেমে যেতো।
সাহাদাত হোসেন লিমন লিখেছেন, হতাশ হবার কিছু নেই! তিনি ফিরবেন; নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য হলেও, দেশের স্বার্থে দেশের মানুষের স্বার্থে হলেও উনাকে ফিরতেই হবে। বর্তমানে উনার বিকল্প এ দেশে আর একজনও হতে পারেন না। সৈয়দ আশরাফ নিজেই শুধু নিজের তুলনা হতে পারেন।
এরশাদ উদ্দিন লিখেছেন, বুকের মাঝে ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল যখন জনাব আশরাফ ভাই এর খবর টিভিতে প্রচার হচ্ছিল। অন্যকিছু বুঝি না, বুঝি একটাই উনি আমাদের কিশোরগঞ্জের সন্তান, কিশোরগঞ্জ ও বাংলাদেশের গর্ব। উনার ক্ষতি মানে আমাদের কিশোরগঞ্জের ক্ষতি। আমি খুবই মর্মাহত দলের জন্য দেশের জন্য উনার মতো নেতা আমাদের খুব দরকার ।
রাজন আহমেদ রাহুল লিখেছেন, সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রী না থাকলে উনার কিছু যাবে আসবে না বা উনি মন্ত্রী থাকাকালীন সুবিধাবাদী লোকজন যে তার কাছ থেকে খুব বেশি সুযোগ নিতে পেরেছে তাও না। তাহলে কেন তার জন্য খারাপ লাগছে? আসলে মন খারাপ হচ্ছে এই ভেবে খন্দকার মোশ্‌তাকরা আবার তাদের জাল বুনে ফেলেছে আমার প্রিয় নেত্রীর চারপাশে। সৈয়দ আশরাফ পদের বা মন্ত্রিত্বের জন্য লালায়িত নন। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি, এই যুগে এমন একজন সৎ, বিশ্বস্ত, নির্লোভী, দলের জন্য নিবেদিত ও নির্ভরযোগ্য নেতা পাওয়া অনেক কঠিন।
রাকিবুল হাসান সেলিম লিখেছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ভাইয়ের মতো আওয়ামী লীগ তথা মন্ত্রণালয়ে একজনও এমন সজ্জন এবং ক্লিন ইমেজের নেতা নেই। যার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতি এবং অনিয়মের কোন অভিযোগ নেই তাকে করা হলো দপ্তরবিহীন মন্ত্রী। আর যাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা রয়েছে এবং যারা পাগলের প্রলাপ করে তারা রয়ে গেলেন মন্ত্রণালয়ে। ১/১১ এর সময় যারা সংস্কারের নামে দলকে দু’ভাগ করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিলেন তখন এই আশরাফই তাঁর দূরদর্শিতা এবং কূটনৈতিক মেধা দিয়ে দলকে রক্ষা করেছিলেন। তারই দূরদর্শিতার কারণে হেফাজতে ইসলামকে ৫ই মে শাপলা চত্বর থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়েছিল। ভয় নেই আশরাফ ভাই- সততার মূল্যায়ন হবেই ইনশাআল্লাহ্‌।

No comments

Powered by Blogger.