ভাঙনের মুখে সড়ক ও ঘরবাড়ি

রূপসা–বাগেরহাট সড়কের এক কিলোমিটার ভৈরব নদের
ভাঙনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বাগেরহাট সদর উপজেলার
মুচিঘাট এলাকার সড়ক যেকোনো মুহূর্তে ভৈরবে বিলীন
হতে পারে। ছবিটি গত বুধবার দুপুরে তোলা l প্রথম আলো
ভৈরব নদের ভাঙনে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে রূপসা-বাগেরহাট সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ। এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ। এতে ভাঙন-আতঙ্কে আছে বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের অন্তত চারটি গ্রামের মানুষ।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানা যায়, খুলনা-বাগেরহাট ২০ কিলোমিটার সড়কটি বাগেরহাটের সঙ্গে খুলনা ও ঢাকার অন্যতম একটি সংযোগপথ। জেলা সদর থেকে ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলাসহ সদর উপজেলার অন্তত চারটি ইউনিয়নের মানুষ এই পথ দিয়ে চলাচল করে। এর মধ্যে সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর, চাঁপাতলা, চাঁপাতলা পূর্বপাড়া, লাউপালা গ্রামের মানুষ চরম আতঙ্কে আছে।
গত বুধবার দুপুরে ওই সব এলাকায় ঘুরে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত-আট বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। পাউবো, ইউপি ভবনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তাৎক্ষণিক উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তেমন লাভ হচ্ছে না। এ বছরে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এবার ভাঙন চলছে।
চাঁপাতলা পূর্ব পাড়ার ফেরিওয়ালা আবদুল মালেক বলেন, ‘ভৈরবের ভাঙনে আমার ঘর-বাড়ি, স্ত্রীর কবর—সবই গেছে। এখন রাস্তার পাশে থাকি। সেখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।’
লাউপালা গ্রামের ব্যবসায়ী এস এম আবদুল্লাহ জানান, এ পর্যন্ত ভাঙনে তাঁর ৯৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৭১ শতাংশ জমি বিলীন হয়েছে। বর্ষাকাল এলেই পরিবার নিয়ে ভাঙন-আতঙ্কে থাকতে হয়। ভাঙনে জমি হারানো চাঁপাতলা গ্রামের তুষার ভট্টসহ কয়েকজন ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, চার বছর আগে তিনি স্থানীয় লোকজন নিয়ে নদীর মধ্যে থাকা একটি চর কেটে স্রোতের গতি বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই চরের চিংড়িঘেরের মালিকদের কারণে শেষ পর্যন্ত কাজ শুরু করেও তা বন্ধ করে দিতে হয়। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবছর এখানে বর্ষাকালে ভাঙন হচ্ছে। কিন্তু সড়ক বিভাগ ও পাউবো এ বিষয়ে সুপরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেয় না। ইউনিয়ন পরিষদের সামর্থ্য সামান্য, তা দিয়ে পরিপূর্ণ কাজ করা যায় না।
বাগেরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন বলেন, গত বছর এখানে বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ী প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল; যা এবার ভেঙে গেছে। এখন আবার অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া জরুরি। কিন্তু পাউবোর তহবিলে কোনো টাকা নেই। এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বরাদ্দ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি পেলেই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.