রূপগঞ্জ জামদানি পল্লীতে কর্মব্যস্ততা

আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদ। এ  উপলক্ষে রূপগঞ্জের নোয়াপাড়ার জামদানি শিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তাদের চোখে ঘুম নেই। নেই নাওয়া-খাওয়া। চারদিকে খুটখাট আর ঠকাঠক শব্দ। দেশে বর্ষণে জলাবদ্ধতা এবং বন্যার কারণে জামিদানি শাড়ির বাজার খুবই মন্দা ছিল। আর এর ধকল কাটিয়ে উঠার সুযোগ ফিরে আসায় শিল্পীরা এখন রাত-দিন জামদানি শাড়ি তৈরিতে সময় কাটাচ্ছেন। আগামী ঈদ ও দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে জামদানি শাড়ির কদর বেড়ে গেছে। এ উপলক্ষে কয়েক কোটি টাকার জামদানি শাড়ি তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিন নোয়াপাড়া জামদানি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে খুটখাট আর ঠকাঠক শব্দ। শিল্পীরা একমনে একেকটি শাড়িতে আল্পনা করে যাচ্ছেন। নাওয়া-খাওয়া কিংবা কারো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই তাদের। জামদানি শিল্পীরা সবাই ব্যস্ত শাড়ি তৈরিতে। পল্লীর প্রতিটি কারখানায় ধুম চলছে শাড়ি তৈরির। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি চলছে শাড়ি তৈরির কাজ। মজুরিও  পাচ্ছেন  দ্বিগুণ। কথা হয় জামদানি নুরুল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বান তুফানে আমাগো ব্যবসায় অনেক লস (ক্ষতি) অইছে। কাপড় বিকে (বিক্রি) নাই। সংসার চালাইবার পারি নাই। ঈদ আওনে কিছুডা উসুল (লাভ) অইছে।’ আরেক জামদানি শিল্পী শাহিন মিয়া বলেন, গত ঈদ থেইক্কা এইবার শাড়ির বাজার কম। মাইনসের পগেডো (পকেটে) মনে অয় টেহা নাই। মওসুমি জামদানি শাড়ির মহাজন জিয়াউল হক বলেন,  গত ঈদে ২শ’ পিস শাড়ি বিক্রি করেছিলাম। এইবার মাত্র ৮০টা বিক্রি করছি। ভারতের শাড়ি অবাধে ঢুকে পড়ার কারণে বাজার নাই। আজগর শাড়ি হাউজের স্বত্বাধিকারী আলী আজগর বলেন, গত কয়েক মাসের ঝড়, বৃষ্টি আর বন্যার কারণে শাড়ি বেচবার পারি নাই। সব মজুত কইরা রাখছিলাম। ঈদ আওনে মনে শান্তি ফিরা পাইছি। এই পর্যন্ত ১৭৩ টা শাড়ি বিক্রি করছি। সামনে আরও অর্ডার আছে। তয় গতবারের মতোন এইবার বেচবার পারি নাই। জামদানি শাড়ি ভারতে রপ্তানি করেন কথা হয় এমন একজন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ভারতে জামদানি শাড়ির চাহিদা তেমন একটা ছিল না। এখন বেশ ক’টি মেলা চলায় বেড়েছে চাহিদা। তিনি আরও বলেন, ঐতিহ্যবাহী মসলিনের আদলে তৈরি আমাদের হাতে বোনা জামদানি শাড়ির কদর ভারতীয়রা ঠিকই বুঝে কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ বুঝে না। জামদানির আদলে নিম্নমানের সুতা দিয়ে তাত মেশিনে তৈরি ভারতীয় শাড়িতে বাজার ছেয়ে গেছে। যেখানে আমাদের একটা শাড়ি ৫ হাজার টাকা বিক্রয় মূল্য থাকে সেখানে ভারতীয় একই শাড়ি বিক্রি করা যায় ১৫শ’ টাকায়। আমাদের দেশের ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেসব লুফে নিচ্ছে।  অপরদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে উচ্চমহলে শাড়ি বিক্রি করা কাউসার জামদানি উইভিং এর মালিক হামিদুল্লাহ মিয়া দাবি করেন এবারের ঈদে দেশে এবং দেশের বাইরে গত কয়েক বছরের  মধ্যে সবচেয়ে ভাল বেচাকেনা  হচ্ছে। ঈদ আর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের  কলকাতা, আসাম, ত্রিপুরা, দার্জিলিংসহ কয়েকটি জেলা ও প্রদেশে জামদানি শাড়ির মেলা বসেছে। ফলে এখন জামদানির চাহিদা বেড়েছে। বিসিক জামদানি শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে দেশ-বিদেশে জামদানি শাড়ির যথেষ্ট কদর বেড়েছে। চলতি ঈদে দেশের এবং বিদেশের বাজারে জামদানি শাড়ির চাহিদা ও যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক। এবার দেশ-বিদেশে অন্তত ১৫ কোটি টাকার জামদানি শাড়ি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়া চোরাইপথে ভারত থেকে নকল শাড়ি আসা ঠেকাতে হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

No comments

Powered by Blogger.