বৃষ্টি, যানজটে দুর্ভোগ

টানা বর্ষণ আর যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। আগের দিন থেকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় গতকাল রাজধানীর অনেক এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানিতে নগরী ও আশপাশের অনেক নিচু এলাকা তলিয়েও যায়। অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলোতে দীর্ঘক্ষণ জলাবদ্ধতা ও কাদার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। অনেক এলাকায় যান চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয় নগরবাসী। বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতেও। জলাবদ্ধতা ও কাদার কারণে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে পারেনি রাজধানীবাসী। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে খুলনা ও সাতক্ষীরায় ১৩৯ মিলিমিটার। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানীর কাকরাইল, শান্তিনগর, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, বংশাল, আজিমপুর, লালবাগ, কমলাপুর, বাসাবো, মুগদাপাড়া, শনিরআখড়া, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক দীর্ঘক্ষণ জলাবদ্ধ থাকে। কোথাও-কোথাও হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক জায়গায় স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। বৃষ্টির কারণে যানবাহন চলাচলও ব্যাহত হয়েছে কোথাও-কোথাও। রিকশা-অটোরিকশার যাত্রীদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। কার্যকর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় অলিগলিতে বিকাল পর্যন্ত হাঁটুপানি জমে ছিল। বাংলামোটর-মগবাজার এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজের কারণে আশপাশের এলাকায় যানচলাচল ব্যাহত হয়। বৃষ্টিতে ডুবে যায় পূর্ব রামপুরার একাধিক অলি-গলি। শান্তিনগর, খিলগাঁও, মালিবাগ মোড়, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, আদাবর, কল্যাণপুর, শ্যামলী ২নং রোডের প্রবেশপথসহ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, রাজাবাজার, তেজতুরি বাজার, মৌচাক মোড়, পুলিশ লাইন, নাখালপাড়া, তেজকুনিপাড়া, খিলগাঁও, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, কাকরাইল, টিকাটুলী, হাটখোলা, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডসহ অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয় সাময়িক জলাবদ্ধতা। ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল ঈদের কেনাকাটা করতে বাইরে বেরিয়েছেন অনেকেই। জলাবদ্ধতার ও কাদার কারণে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ধানমন্ডি এলাকায় ওয়াসার রাস্তা খোঁড়ার কারণে কাদায় ঢেকে গেছে রাস্তা। ফলে পায়ে হাঁটা মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিম বঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল নিম্নচাপ হিসাবে বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়ায় পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.