তবুও ভিড়

দিনভর বৃষ্টির বাগড়া থাকলেও শেষ মুহূর্তে ঈদের কেনাকাটায় উপচেপড়া ভিড় ছিল রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে। ঈদের শেষ ছুটির দিন হওয়ায় বৃষ্টিকেও উপেক্ষা করে মার্কেট ও শপিং মলে আসতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। রাজধানী সুপার মার্কেট। অনেক পুরনো এ মার্কেটের অবস্থান টিকাটুলী, হাটখোলা ও বলধা গার্ডেনের কাছাকাছি। সঙ্গে রয়েছে সালাহউদ্দিন ও চৌধুরী শপিং মলও। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের এ সব মার্কেটে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, জুরাইন, পোস্তগোলা, দয়াগঞ্জ, স্বামীবাগ থেকে আসেন ক্রেতারা। কখনও শনির আখড়া, রায়েরবাগ ও চিটাগং রোড এলাকা থেকেও ক্রেতারা ভিড় জমান। চিটাগং রোড থেকে আসা আশরাফুন নেসা মুক্তা বলেন, শনিবার ভোরে বাড়ি যাবো। তাই বৃষ্টির মাঝেও কিছু কেনাকাটা করতে এলাম। তিনি বলেন, পুরনো এ মার্কেটে ভাল পোশাক পাওয়া যায়। দামও কম। চার জনের জন্য তিনি মাত্র চার হাজার টাকায় সেরে ফেলেন ঈদ কেনাকাটা। বিদেশী পোশাকের জন্য বিখ্যাত গাজী ও পলওয়েল মার্কেট। নয়াপল্টনে অবস্থিত আমদানিনির্ভর বিপণিবিতান পলওয়েল ও গাজী সুপার মার্কেটেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। দোকানিরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি কিছুটা বাধার সৃষ্টি করলেও ছুটির দিন হওয়ায় বেচাকেনায় অসুবিধা হচ্ছে না। ক্রেতারা তাদের সুবিধামতো করছেন পছন্দের কেনাকাটা। বিদেশী পণ্যের মার্কেট হিসেবে রাজধানীবাসীর কাছে বিশেষ পরিচিতি পাওয়া এ দুটি মার্কেটের পণ্য আমদানি হয় থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া ও পাকিস্তান থেকে। এর মধ্যে থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতের পণ্যই বেশি। ঈদ কেনাকাটার শুক্রবার পলওয়েল সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, পলওয়েলে বর্তমান ফ্যাশনের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে বেশি। ছোট-বড়দের থ্রি-পিস, শর্ট ও লং লেহেঙ্গা, বোম্বের পাঞ্জাবি, পাকিস্তানি থ্রি-পিস, ছেলেদের শার্ট, জুতা, কেডস ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে মেয়েদের জুতা-স্যান্ডেলও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ মাহিদ বলেন, ব্র্যান্ডেড জিন্স কেনার জন্য এখানে আসি। এখানকার কাপড়গুলো উন্নতমানের ও দাম সাধ্যের মধ্যে। মাকের্টের দোকান ফেয়ার ট্রেডের স্বত্বাধিকারী আবদুল হক বলেন, একদিকে ছুটির দিন। অন্যদিকে শেষ মুহূর্ত। সব মিলিয়ে বেচাকেনা ভাল। প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে থাকা গাজী ভবনে ১০০টি পাইকারি দোকান রয়েছে। এখানে প্রায় সব শো-রুম নতুন পোশাকে ভরে উঠেছে। বিক্রির চাপে এককভাবে বসে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে দোকানিরা জানান, এ ঈদে বেচাকেনা যথেষ্ট ভাল। কাকরাইল ও শান্তিনগর এলাকায় কেনাকাটার পরিচিত মার্কেট কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি ও টুইন টাওয়ার কনকর্ড। এছাড়া রয়েছে বেইলী স্টার। ছুটির দিনে এসব মার্কেট ও শপিংমলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।  ছুটির দিনে ক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম মার্কেটগুলো। দোকানিরা জানান, এ সব মার্কেটে বেশির ভাগ শো-রুমে ভারতীয়, পাকিস্তানি সালোয়ার-কামিজের কালেকশন রয়েছে। ভারতীয় সিরিয়ালের চরিত্রের নামে এগুলোর দেয়া হয়েছে বাহারি নাম। আর শাড়ির বেশির ভাগই হয় ইন্ডিয়ান কাতান, নয়তো সিল্ক। আছে লেহেঙ্গা, টপসহ অন্যান্য পোশাকও। শুধু নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রেই নয়, পুরুষের পোশাকেও প্রাধান্য পাচ্ছে থাইল্যান্ড, জাপান ও চীন থেকে আসা সব পণ্য। পুরুষের পাঞ্জাবিতেও প্রতিবেশী দেশের প্রভাব চোখে পড়ার মতো। এছাড়া পাওয়া যাচ্ছে পার্টি ফ্রক, হাতের জমকালো কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, ঘাগরাচোলি।
রাজধানীর মধ্যভাগে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি ও ইস্টার্ন প্লাজা। বাংলামোটর, কাওরানবাজার, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল সুন্দরবন, ফার্মগেটজুড়ে অভিজাত এ সব শপিংমলের অবস্থান। ছুটির দিনে বিশেষত বসুন্ধরা শপিংমলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বিভিন্ন শো-রুম তরফে জানানো হয়, এ মার্কেটে দেশের প্রায় সব বড় বড় ফ্যাশন হাউস, আন্তর্জাতিক মানের পোশাক প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড দোকান, জুতার দোকানসহ রয়েছে বিদেশী নামিদামি ব্র্যান্ডের আউটলেট। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের ডিসপ্লে উইন্ডোতে তুলেছে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক, জুতাসহ অন্যান্য সামগ্রী। বসুন্ধরায় জেন্টেল পার্ক, গ্লো গ্রাসি, আড়ং, ইনফিটিনিটি, ক্যাটস আই, নবরূপা, সাদাকালো, দর্জি বাড়ি, দেশী দশ ইত্যাদি শো-রুমে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। মার্কেটের ইয়েলো, এস্টেসি, রিচম্যান, আর্টিজন, আর্টিস্টি কালেকশন, গ্রামীণ, টেক্সমার্ট, ফিট এলিগেন্স, লিভাইসসহ অন্য পোশাকের দোকানগুলোতেও হাল ফ্যাশনের পোশাকের ছড়াছড়ি দেখা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.