‘ঘটনাস্থলেই ছিলাম না’ by ওয়েছ খছরু

‘আমি ওসমানীনগরে ইফতার করেছি। আর আমি যেহেতু ছিলাম না সেহেতু গুলি করার প্রশ্নই ওঠে না। সার্কিট হাউজ দখলে রাখা নেতারাই গুলি করেছে। পরিস্থিতি অশান্ত করেছে।’-এমনটি জানিয়েছেন, সিলেট-২ আসনের এমপি ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরী। সিলেট সার্কিট হাউজে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন সিলেটের এই তরুণ এমপি। জাতীয় পার্টির সিলেটের অনেক সিনিয়র নেতাই প্রকাশ্য তার বিরুদ্ধে নেমেছেন। বিষোদগার করছেন। জাতীয় পার্টির সিলেট আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী দাবি করেছিলেন, ‘এমপি এহিয়া ও তার ভাইদের নেতৃত্বে সার্কিট হাউজে গুলি হয়েছে। সার্কিট হাউস ভাঙচুর হয়েছে।’ কিন্তু এমপি এহিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সার্কিট হাউজের সিসিটিভি দেখেন। আমি কিংবা আমার ভাইরা ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম এমনটি প্রমাণ করতে পারলে আমি রিজাইন দেবো।’ সার্কিট হাউজ ভাঙচুর ঘটনায় প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় তার দুই ভাইকে আসামি করা হয়েছে। এতে এমপি এহিয়া ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভাইদের আসামি করায় তিনি প্রশাসনের উপরও চটেছেন। আর এ মামলা নিয়ে প্রশাসনও নিয়েছে নাটকীয়তার আশ্রয়। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। জেলা প্রশাসন বলছে, যে এজাহার তৈরি করেছে সেটিই মামলা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, জেলা প্রশাসন যে এজাহার দিয়েছেন সেটি নেয়া হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর সফরকে ঘিরে। মহাসচিব সিলেটে এসে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে শরীক হন। এরপর তিনি রাতে সিলেট সার্কিট হাউজের ভিআইপি কক্ষে বৈঠকের প্রাক্কালে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান ও এমপি এহিয়ার গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষকালে ব্যাপক গোলাগুলি ছাড়াও সার্কিট হাউজে তাণ্ডব চালানো হয়। এই ঘটনায় রাতে পুলিশ জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ, জাতীয় পার্টির সিলেটের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মালেক খানসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৮ জন এমপি এহিয়া বলয়ের নেতা হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদসহ ১০ জনই ছিলেন তাজ রহমান গ্রুপের নেতা। সংঘর্ষের দিন তাদের গ্রেপ্তারের সময় সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ জানিয়েছিলেন, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা হবে। কাউকে ছাড়া হবে না। কিন্তু রাতেই বদলে যান ওসি সোহেল আহমদ। রাতে জাতীয় পার্টি সিলেটের সিনিয়র নেতারা থানায় গিয়ে সাব্বির আহমদ, মালেক খানসহ ১০ জনকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু এমপি এহিয়া তার গ্রুপের নেতাদের ছুটিয়ে আনতে কোন চেষ্টা করেননি। বরং কোতোয়ালি থানার ওসি ফোন করে তার বলয়ের নেতাদের ছেড়ে দেয়ার অনুমতি চাইলেও এমপি এহিয়া তাতে কান দেননি। তিনি আটককৃত সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে, এমপির কথা না শুনেই রাতে তাজ রহমান গ্রুপের নেতাদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন এমপি এহিয়া গ্রুপের নেতারা। ওদিকে, এ ঘটনায়  সার্কিট হাউজের নাজির মো. ফজলুল হক বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এমপি ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরীর ছোটো ভাই সহল আল রাজি চৌধুরী ও সালমান চৌধুরী শাম্মীকে আসামি করা হয়েছে। দলীয় ঘটনায় তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলায় ঘটনায় চটেছেন এমপি এহিয়া চৌধুরী। রাজনৈতিক মামলায় তার দুই ভাই আসামি হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রশাসনের উপর। তিনি বলেছেন, তার ভাই সহল ও সালমান জাতীয় পার্টির কোন নেতা নয়। তারা দলের কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। আর বুধবার তারা দুইজনের মধ্যে সহল তার সঙ্গে ওসমানীনগরে ও সালমান বাসাতেই ইফতার করে। বলা হয়েছে, এমপি এহিয়ার নেতৃত্বে সার্কিট হাউজে হামলা হয়েছে। কিন্তু গতকাল এমপি এহিয়া মানবজমিনের কাছে বলেছেন, তার দুই ভাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। পারিবারিকভাবে তাকে বিপর্যস্ত করতে রাজনৈতিক মাঠের প্রতিপক্ষরা তার ভাইদের আসামি করেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন কর্মী ওই দিন তার সঙ্গে ওসমানীনগরে ইফতারে ছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার রটাচ্ছে। আমাকে দলের কাছে বিতর্কিত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির মূল নেতৃত্ব এমপি এহিয়াকে ভালভাবে চেনেন। আমি কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, আগামীতেও করবো। ওদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফায়েজ আহমদ জানিয়েছেন, আটককৃতদের মধ্য থেকে ৮ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিরা পথচারী হওয়াতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পথচারীদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বিরও ছিলেন কি না- এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। এদিকে, সিলেট সার্কিট হাউজে হামলা-ভাঙচুর ও মামলা দায়েরের প্রতিবাদে বিশ্বনাথে মিছিল সভা করেছেন জাপার নেতাকর্মীরা। গতকাল বিশ্বনাথ উপজেলা জাপার উদ্যোগে এ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্বনাথ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করার পর এবং নেতাকর্মীরা সভায় মিলিত হন। মিছিল পরবর্তী সভায় বক্তারা বলেন, সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা জাতীয় পার্টির কাণ্ডারী ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে একটি চক্রান্তকারী মহল তার দুই ভাইকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। যারা হামলা করে সার্কিট হাউজ ভাঙচুর করেছে বিশ্বনাথ উপজেলা জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম লালুকে হামলা চালিয়ে আহত করেছে তাদেরকে মামলায় আসামি না করে ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরীর দুই ভাইসহ কয়েকজন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। যারা এ ঘটনার কিছুই জানেন না। তারা কিভাবে মামলার আসামি হলেন।

No comments

Powered by Blogger.