আশরাফকে নিয়ে মন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দপ্তর হারানোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এ পরিবর্তন হয়েছে। সামনে আরও হবে। দলের সাধারণ সম্পাদকের দপ্তর হারানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, তাকে সাধারণ সম্পাদক করার সময়েই এমন চিন্তা ছিল। মন্ত্রিসভায় আরও পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেন তিনি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দলের কাজ বেশি করার জন্যই সৈয়দ আশরাফকে হয়তো অতিরিক্ত ভারমুক্ত করা হয়েছে। দলের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, দেশ এবং দলের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার সিলেটের কাজীরবাজারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন হাত দিয়েছেন, দেখা যাক কি হয়। আই হ্যাভ নো আইডিয়া। একটু রিকাস্টিং হবে। কিন্তু কিভাবে হবে তা বলা মুশকিল। মুহিত বলছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি তিনি এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা আগে থেকেই জানতেন। আশরাফ সাহেবের যে পোর্টফোলিও পরিবর্তন হবে এটা অবশ্য আমরা কয়েকজন জানতাম। মন্ত্রিপরিষদের পরিবর্তন- এটা প্রাইম মিনিস্টারের এখতিয়ার। প্রাইম মিনিস্টার করেছেন, দ্যাটস ইট। সৈয়দ আশরাফ যখন সাধারণ সম্পাদক হন তখনই একটি প্রস্তাব ছিল তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার। প্রধানমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্তই হয়তো এতোদিন পর বাস্তবায়ন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী যে কোন ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট পদ থেকে বাদ দিতে পারেন: মোশাররফ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান,  নতুন এলজিআরডি মন্ত্রী খোন্দকার মোশারেফ হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্র এবং সংগঠনের প্রয়োজনে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিকভাবে যে কোন সময় যে কোন ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট পদ থেকে বাদ দিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে তাকে রাখতেও পারেন। কারণ এটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। দলের মহাসচিবকেই কেবলমাত্র এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে তা ঠিক নয়।
গতকাল বিকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত মন্ত্রী আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার  মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, আমার বর্তমান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনেক ঝামেলা ও ভেজাল ছিল। সেটা আমি পরিপূর্ণভাবে দুর্নীতি মুক্ত করেছি, যা সকলেই জানেন। এলজিইডি আমার নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকেও দুর্নীতিমুক্ত করতে আমার বেশি সময় লাগবে না।
এর আগে মন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ফাতেহা পাঠ ও বঙ্গবন্ধুর জন্য মোনাজাত করেন।
এ সময় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী,  গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরের প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, দুই  জেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু ভবনে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।
দলে বেশি সময় দেয়ার জন্যই অব্যাহতি: ওবায়দুল কাদের
দলে আরও বেশি করে সময় দেয়ার জন্যই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজের দুই প্রান্তের সড়ক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করতে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়তো মনে করেছেন দলের কাজে তাকে (সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম)  আরও বেশি সময় দেয়া প্রয়োজন। আর সেটা করতেই তিনি তাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন করায় দলে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যেক দেশেই সরকার প্রধান থাকেন, আমাদের দেশেও আছেন। তিনি প্রয়োজন মনে করলে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন, সরিয়েও নেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
দেশ ও দলের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত-সুরঞ্জিত
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে মন্ত্রিত্ব বড় ব্যাপার নয়। আর এ নিয়ে সরকার গেল গেল বলে চিৎকার করারও কিছু নেই। তিনি আরও বলেছেন দেশ, জাতি ও দলের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী’ আয়োজিত চলমান রাজনীতি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুরঞ্জিত এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, মন্ত্রিসভায় কে কি দপ্তর পাবেন, তা একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আর এ নিয়ে সরকার গেল গেল বলে চিৎকার করারও কিছু নেই। তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফ একজন আপাদমস্তক রাজনীতিক। তার কাছে মন্ত্রিত্ব বড় ব্যাপার নয়। তিনি যেখানেই থাকবেন সেখানেই পারিবারিক ঐতিহ্য এবং জাতীয় চার নেতার একজনের সন্তান হিসেবে নিজের মেধা ও মননে একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে ভূমিকা রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ, জাতি ও দলের স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন সাবেক এই মন্ত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সৌদি আরবে ওমারহ পালন বাতিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ইংল্যান্ড থেকে তো তার ছেলে তারেক রহমানকে বলে দেয়া হয়েছে, সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে যেতে পারবে, কিন্তু আসতে পারবে না। আর খালেদা জিয়াকেও সৌদি আরব আগের মতো কদর করছে না। বেশি বহর নিয়ে ওমরাহ পালনের দাওয়াতও দিচ্ছে না। একজন মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন সচিবের বিচার কি যুগ্ম সচিব করতে পারেন? ডিসির বিচার কি এডিসি করতে পারেন? ওই তদন্ত কমিটিতে সরকারের উচ্চ মহলের লোক থাকা প্রয়োজন ছিল। এর পরেও বলব, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর যথাযথ বিচার হওয়া প্রয়োজন। নৌকা সমর্থক গোষ্ঠীর সভাপতি এমদাদুল হক সেলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নারায়ণ দেব নাথ, শেখ ইকবাল খোকন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.