ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বেঞ্চ কিনতে ১০টি গাছ বিক্রি! by মুসা আহমেদ

ফজলুল হক মহিলা​ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রাঙ্গণে পড়ে
আছে কেটে ফেলা গাছের কাণ্ড ও ডালপালা l প্রথম আলো
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ১০টি বড় ‘রেইনট্রি’ গাছ বিক্রি করে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে তিনটি গাছ কেটে ফেলেছে ক্রেতারা। পরিবেশবাদী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদের মুখে বাকি সাতটি গাছটি রক্ষা পেয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, বেঞ্চ কিনতে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
গাছগুলো কেটে ফেলায় কলেজের পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের পশ্চিম পাশের দেয়ালসংলগ্ন তিনটি রেইনট্রি গাছ কেটে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি গাছের চারপাশের শিকড় ছেঁটে কেটে ফেলার জন্য প্রস্তুত রাখা রয়েছে। কেটে ফেলা গাছগুলোর ঢালপালা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কলেজ মাঠে। এ ছাড়া বিক্রি করা বাকি ছয়টি গাছ রয়েছে কলেজের পেছনের অংশে৷
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাছগুলো বিক্রির পর গত ৩০ জুন থেকে তা কেটে ফেলা শুরু করেন ক্রেতারা। ২ জুলাই পর্যন্ত তিনটি গাছ কেটে ফেলেন তাঁরা। পরদিন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পক্ষ থেকে গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানায়। এ সময় বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, আলমগীর কবির ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদউল্লাহসহ প্রায়
৫০-৬০ জন স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের প্রতিবাদের ফলে কেটে ফেলা থেকে রক্ষা পেয়েছে বাকি ছয়টি গাছ।
সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় জনগণ খবর দিলে বাপার নেতৃবৃন্দ নিয়ে কলেজে গিয়ে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানাই। কারণ, কলেজ এলাকাটি অনেক জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় গাছগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ ছাড়া গাছগুলো জনগণের সম্পত্তি। তাই এগুলো বিক্রি করা অপহরণের শামিল।’
কলেজ সূত্র জানায়, সম্প্রতি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের ‘বোর্ড মিটিং’-এ গাছগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়। গাছগুলো বিক্রি করতে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অভিভাবক জহির উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করে। এই কমিটি ১০টি গাছ বিক্রি করেছে মাত্র ৭০ হাজার টাকায়৷
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, গাছগুলো থাকায় কলেজটি অনেক সুন্দর দেখাত। কিন্তু তা কেটে ফেলায় আগের মতো এখন আর সেই সৌন্দর্য নেই।
এ বিষয়ে জহির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই গাছগুলো ছিল কলেজের দেয়ালসংলগ্ন। ফলে গাছের ডাল-পাতা পাশপাশের বাড়ির ওপর গিয়ে পড়ত৷ এতে করে বাসিন্দারা বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছিলেন৷ তাই গাছগুলো বিক্রি করে কলেজের শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।’

No comments

Powered by Blogger.