চুরি থেকে উদ্ধার নবজাতকটি যাচ্ছে নতুন ঠিকানায় by মানসুরা হোসাইন

‘মনে হয় অনেক অাদরের ছিল। কোল থেকে নামালেই কান্না শুরু করে। তাই আমরা ওকে কোলে কোলেই রাখি।’—ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকদের জন্য বিশেষ ওয়ার্ডের একজন নার্স চুরির হাত থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে কোলে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন। জন্মের পর মা-বাবা হয়তো আদর করে মেয়ে নবজাতকের কোনো নাম রেখেছিলেন। তবে এখন সে ‘অনামিকা’। সবাই চেনে চুরির হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া নবজাতক হিসেবে। নবজাতকটির থাকার কথা মায়ের বুকে। কিন্তু অচেনা মায়ের মানিক এখন হাসপাতালের ওয়ার্ডের অন্য গুরুতর অসুস্থ নবজাতকদের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছে। এখন তাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। র‍্যারের দাবি, ১৫ ডিসেম্বর র‍্যাব-৩-এর একটি দল গোপন সংবাদে জানতে পারে এক নবজাতককে বিক্রি করা হবে। পরে লালবাগ থানার নবাবগঞ্জের ১৩১/৩, শাহারোডে অভিযান চালিয়ে দুই সপ্তাহ বয়সী নবজাতককে উদ্ধার করেন দলের সদস্যরা। উদ্ধারের পর র‍্যারের কাছ থেকে লালবাগ থানার তত্ত্বাবধানে চলে যায় নবজাতকটি। বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া শেষে নবজাতকটির জায়গা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে।
উদ্ধার হওয়া এই নবজাতককে কার কাছে রাখা হবে—তা জানতে চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে লালবাগ থানা। তদন্তকারী কর্মকর্তা ফারুকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ ডিসেম্বর আদালতের কাছ থেকে রায় পাওয়া গেছে। রায়ে নবজাতকটিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আশ্রয়কেন্দ্র ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। আজ রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের ইনচার্জ জয়ন্তি ঘাগড়া বলেন, ‘আজ দুপুরে থানা থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কাল সোমবার সকালে নবজাতককে হাসপাতালের সমাজকল্যাণ বিভাগের হাতে হস্তান্তর করার জন্য হাসপাতালের পরিচালক নির্দেশ দিয়েছেন। সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে নবজাতককে পাঠানো হবে ছোটমণি নিবাসে।’
গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে নবজাতক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, একজন নার্স নবজাতকটিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। তাকে বাইরের প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। ওয়ার্ডে সেই একমাত্র সম্পূর্ণ সুস্থ নবজাতক। ফলে চিকিৎসক ও নার্সরা তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। সে যাতে অন্যদের মাধ্যমে সংক্রমণের শিকার না হয়, সে জন্য তাঁরা তৎপর।
নবজাতককে উদ্ধারের পর চুরির সঙ্গে জড়িত চারজন নারী এবং একজন পুরুষকে আটক করা হয়। লালবাগ থানায় মামলা হয়েছে। লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত নবজাতকটির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। যাঁদের আটক করা হয়েছে তাঁরা এখন জেলে আছেন। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলের সদস্য মনোয়ারা নামের এক নারী নবজাতকটিকে বিক্রি করার জন্য দলের অন্যদের কাছে দিয়েছিলেন। তবে মনোয়ারাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে।
আজ রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরাও চাচ্ছি দ্রুত এই নবজাতকটি একটি নিরাপদ আশ্রয়ে যাক। হাসপাতালে অসুস্থ নবজাতকদের সঙ্গে সুস্থ নবজাতককে রাখা যুক্তিসংগত নয়।’
তবে আজিমপুর ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের আদেশের কোনো কপি হাতে পাইনি। আমাদের এখানে কয়েক মাস বয়সী আরও কয়েকটি বাচ্চা আছে। আমাদের জায়গা এবং জনবলসংকট প্রকট। ফলে এই নবজাতককে রাখা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.