জঙ্গিবাদ : পাকিস্তানের পুরনো অভিশাপ

মাত্র এক সপ্তাহ আগেও পাকিস্তানের লাল মসজিদ ইসলামী চরমপন্থার একটা অস্পৃশ্য দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো ও প্রতিক্রিয়াশীলতা উৎপাদনে এই মসজিদের ইমাম নির্বিঘ্নে ভূমিকা রাখছিলেন। কিন্তু এই শুক্রবারে লাল মসজিদের সামনে শত শত বিক্ষোভকারী ইমামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেছেন। তালেবানের পক্ষে তার বক্তব্যের বিরুদ্ধে গর্জন তুলেছেন সাধারণ জনতা। ২০০৭ সালে তালেবানের উত্থানের পর থেকে এমন দৃশ্য কখনও দেখা যায়নি। পেশোয়ারে তলেবান জঙ্গিদের ভয়াবহ হামলায় প্রায় দেড়শ’ শিশুর প্রাণ পাকিস্তানকে শোকে স্তব্ধ ও বিক্ষোভে উত্তাল করেছে। এ হামলার আগে পাকিস্তানের নেতৃত্বের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতাযুদ্ধ চলছিল। লাল মসজিদের ইমামের সমর্থনও ছিল কোনো কোনো নেতৃত্বের প্রতি। কিন্তু শিশুদের ওপর একটি গণহত্যার পর বিষাদ ও বিক্ষোভে এক ধরনের রাজনৈতিক ঐক্যবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সমাজের সব অংশ থেকেই জঙ্গিবাদবিরোধী স্লোগান উঠেছে। এই প্রথমবারের মতো ধর্মীয় দলগুলো ও অতি রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা প্রকাশ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, জনগণ তাদের সমর্থন করবে। লাল মসজিদের সামনে থেকে একজন বিক্ষোভকারী জিবরান নাসির বললেন, ‘এটা তালেবানবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেবে।’
কিন্তু সন্দেহ থেকেই যায় যে, দ্বিধাবিভক্ত সমাজ, সাংঘর্ষিক সংস্কৃতি ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর কৌশলগত দুর্বৃত্তায়নে জর্জরিত পাকিস্তান আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা। এই বিপর্যয় পাকিস্তানের জন্য কোনো সন্ধিক্ষণ হবে কিনা তার এখনই বলা মুশকিল। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস পাকিস্তানের পুরনো অভিশাপ। ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোকে হত্যাসহ মসজিদ, মাদরাসা, চার্চ, বাজারে বোমা হামলা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিশোরী মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর আক্রমণ, মালালাকে পশ্চিমাদের সমর্থন আর তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণতা তালেবানদের হিংস্র করেছে। তাছাড়া জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সেনা সংশ্লিষ্টতার মতো পুরনো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। তাই এত ক্ষোভ ও অশ্র“ পাকিস্তানের টেকসই পরিবর্তনে কোনো অবদান রাখকে কিনা তাতে সংশয় থেকেই যায়।
২০১১ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পাকিস্তান সফরে গিয়ে সেই পুরনো গল্পটাই বলেছিলেন, ‘নিজের পিঠে সাপকে জায়গা দিলে সেই সাপ কেবল প্রতিবেশীকে কামড়াবে তা আশা করা যায় না।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এখন সব দলের সমন্বয়ে একটি কমিটি করেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা তালোবানবিরোধী ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের নতুন কৌশল নির্ধারণ করবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এই সময়ে পাকিস্তান নতুন কোনো বিভ্রান্তিতে পড়ে কিনা। নিউইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.