সুন্দরবনে জাহাজডুবি- তেলের কারণে দুটি ভোঁদড়ের মৃত্যু by ইফতেখার মাহমুদ

সুন্দরবনের শ্যালা নদী থেকে গত বৃহস্পতিবার বন বিভাগের কর্মীরা মৃত দুটি ভোঁদড় উদ্ধার করেছেন। গতকাল শনিবার ভোঁদড় দুটির ময়নাতদন্ত করে বন বিভাগ। এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে, ভোঁদড় দুটির মৃত্যু হয়েছে শরীরে তেল প্রবেশ করায়। বন বিভাগের প্রাণী চিকিৎসকেরা প্রাণী দুটির মুখে ও ফুসফুসে ফার্নেস তেল পেয়েছেন। একসময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোতে অসংখ্য ভোঁদড়ের দেখা মিলত। এখন শুধু সুন্দরবনেই এর দেখা মেলে। দেশে এই প্রাণীটি মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। নড়াইল ও সুন্দরবনের জেলেরা ভোঁদড় দিয়ে বড় মাছ শিকার করেন বলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকসহ বিশ্বের বিভিন্ন বন্য প্রাণিবিষয়ক সংস্থা ভোঁদড় নিয়ে গবেষণা করছে। ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল নিয়ে জাহাজডুবির পর থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই তেল বিপর্যয়ে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে শ্যালা নদী ও পশুর নদের পানি পরীক্ষা করে বলা হয়েছিল, ওই শ্যালা ও পশুরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য অনুকূল মাত্রায় রয়েছে। অর্থাৎ এখানকার পানি প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য আশঙ্কামুক্ত।
তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর নেতৃত্বে শুরু হওয়া বছরব্যাপী গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, পূর্ব সুন্দরবনের নদীর পানিতে দ্রবীভূত তেলের পরিমাণ বিপৎসীমার অনেক ওপরে রয়েছে; যা ভোঁদড়, কাঁকড়া, চিংড়ি, হরিণ, প্রাণিকণা, উদ্ভিদকণা ও মাছের ডিমের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন বিভাগের প্রধান বন্য প্রাণী সংরক্ষক তপন কুমার দে প্রথম আলোকে জানান, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকলেও দ্রবীভূত তেলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা পানির সঙ্গে প্রাণীদের দেহে চলে যাচ্ছে। ময়নাতদন্ত করে দেখা গেছে, ভোঁদড় দুটি ফার্নেস তেলের কারণেই মারা গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান ১২ ডিসেম্বর সুন্দরবনে যান। তিনি সেখানে মৃত প্রাণীর দেহ খায় এমন প্রজাতির পাখি, মাছ, ইগল, শঙ্খচিল, কালো চিল, চেনজিয়াবল সাদা ইগল ও শকুনের আনাগোনা দেখতে পান। শীতের এই সময়ে সাধারণত এসব পাখিকে পূর্ব সুন্দরবনে দেখা যায় না। মূলত এই পাখিদের প্রধান খাবার মৃত প্রাণীর দেহ।
মনিরুল খান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বরের শেষে এসে এই পাখিগুলো পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় থাকার কথা নয়। এর আগে এই সময়ে এদের এখানে দেখা যায়নি। মৃত অসংখ্য প্রাণীর দেহ আছে এমন খোঁজ ও ঘ্রাণ পেলেই এরা এ এলাকায় এসে হাজির হয়। এই ইগল, চিল ও শকুনদের দেখে মনে হচ্ছে, সুন্দরবনে অসংখ্য প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।
৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির পর থেকে বন বিভাগের বন্য প্রাণী চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ ও মফিজুর রহমানের সমন্বয়ে ছয় সদস্যের একটি দল প্রতিদিন পূর্ব সুন্দরবন পরিদর্শন করছে। দলটি গতকাল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় শরীরে তেলমাখা কুমির ও গুইসাপ দেখতে পেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.