নওয়াজসহ রাজনৈতিক নেতার সন্তানদের হত্যার হুমকি

পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনা স্কুলে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর এবার দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের ছেলেমেয়েদের হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী টিটিপি। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সন্তানদের বিরুদ্ধেও তারা একই হুমকি দিয়েছে। শুক্রবার দুই জঙ্গিকে ফাঁসি দেয়ার জবাবে টিটিপির শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদ খোরাসানি এক চিঠিতে এ হুমকি দেয়। তবে ফাঁসি থেকে সরে আসেনি দেশটির সরকার। শনিবার আরও ৮ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এদিন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৩২ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে ৯৯ জঙ্গি নিহত হল। আগামী মঙ্গলবার হবে আরও দুই জঙ্গির ফাঁসি। খবর ডন, জি নিউজ, এএফপি ও বিবিসির।
নওয়াজসহ রাজনীতিকদের সন্তানকে হত্যার হুমকি : প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদেও ছেলেমেয়েদের হত্যার হুমকি দিয়ে শুক্রবার চিঠি দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি)।
চিঠিতে নওয়াজ শরিফকে সতর্ক করে দিয়ে জঙ্গিরা বলে, তাদের সহযোগীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং সেনা কর্মকর্তাদের সন্তানদের হত্যা করবে। তাদের ওই হামলা থেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকেও রেহাই দেয়া হবে না।
টিটিপি দলের শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদ খোরাসানির লেখা ওই চিঠি শুক্রবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের সরকারি কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছে। তারা এ চিঠির সত্যতা যাচাই করছেন। চিঠিতে স্কুল হামলার পক্ষেও সাফাই গেয়েছে জঙ্গিরা। তারা বলেছে, নিহত ওই শিশুরা বড় হয়ে তাদের বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করত। তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে।
চিঠিতে সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, কারাবন্দি একজন জঙ্গিকেও যদি ফাঁসি দেয়া হয় তবে তারা আরও শিশুকে হত্যা করবে। তাদের ভাষায়, পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই যে, আর আমাদের একজন সহযোগীকেও যদি ফাঁসি দেয়া হয়, তবে আমরা এর প্রতিশোধ নেব এবং তোমাদের সন্তানদের হত্যা করব। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই, যে কোনো সেনা কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতার বাসভবনে প্রবেশ করার ক্ষমতা আমাদের আছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে।
১০ জঙ্গির ফাঁসি : শনিবার রাতে ৮ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কোট লাকপাট, আদিয়ালা এবং বাহাওয়ালপুর জেলে এসব জঙ্গির ফাঁসির কথা জানান পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুজা খানজাদা। তবে এ ৮ জঙ্গির পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলেননি তিনি।
আগামী মঙ্গলবার আরও দুই জঙ্গিকে ফাঁসি দেয়া হবে। তারা হলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-জাঙ্গভির সদস্য আতাউল্লাহ ওরফে কাসিম এবং মোহাম্মদ আযম ওরফে শরিফ। সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গত দশ বছর আগে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও এতদিন পর্যন্ত তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার পকিস্তানের এক সন্ত্রাসবিরোধী আদালত আতাউল্লাহ এবং আযমের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন এবং শুক্কুর জেল কর্তৃপক্ষকে এই রায় বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হবে বলে জানা গেছে।
শুক্কুর জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর আগেও আদালত বেশ কয়েকবার তাদের ওই দুজনের মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পাক প্রেসিডেন্ট ওই রায়ের বিরুদ্ধে স্টে অর্ডার দেয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো সম্ভব হয়নি।
এর আগে শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের ফয়সালাবাদেও কেন্দ্রীয় কারাগারে ড. ওসমান ওরফে আকিল এবং আরশাদ মাহমুদ নামের ওই দুই ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ৬ বছর ধরে পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কেবল এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল। এক সহকর্মীকে হত্যা করার দায়ে ২০০৮ সালে এক সেনাকে ফাঁসি দিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক আদালত। পেশোয়ারে স্কুল হামলার একদিন পর বুধবার মৃত্যুদণ্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
পেশোয়ার হামলাকারীর আরও হামলার হুমকি : পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ না করলে আরও পেশোয়ারে স্কুল হামলার মতো আরও হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে ওই হামলার পরিকল্পনাকারী জঙ্গি কমান্ডার উমর মনসুর। খলিফা উমার বা উমার নারেয়ি নামেও পরিচিত এই জঙ্গি নেতা। টিটিপির ওয়েবসাইটে পোস্ট করা ইংরেজি সাবটাইটেলসহ এক মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে এসব কথা জানিয়েছেন উমর।
সেনাবাহিনীর অভিযানে তালেবান যোদ্ধাদের পরিবার ও শিশুদের নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুল ও কলেজে হামলা চালানো হয়েছে বলে এতে দাবি করেন তিনি।
৩২ জঙ্গিসহ নিহত : সকালে খাইবার অঞ্চলের তিহার উপত্যকায় সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ২১ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। এছাড়া পেশোয়ার থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে শবকদার শহরের মেচানি এলাকায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা বিলায়াত খান বলেন, মেচানিতে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে ফ্রন্টিয়ার কোর (আধাসামরিক বাহিনী) এক সৈন্য ও এক পুলিশ শহীদ হয়েছেন। এ অভিযানে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) দুই সদস্যও নিহত হয়েছেন।
অপর ঘটনায় টিটিপির পাঁচ সদস্য নিহত হন। এদের মধ্যে স্থানীয় এক কমান্ডারও রয়েছেন। এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, মাতনির গুজার গাদি এলাকার টিটিপির একটি আস্তানায় নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে ৫ জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এলাকাটি পেশোয়ার থেকে প্রায় ১৬ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।
এছাড়া আদিবাসী অধ্যুষিত উত্তর ওয়াজিরিস্তানের দত্তখেল হেশিলে মার্কিন ড্রোন হামলায় চার সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.