ওসমানীনগরে মামলার আসামি স্কুলছাত্র দিনমজুর ও কৃষক

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে ওসমানীনগরের পরিস্থিতি। ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের অভিযানের মুখে বাজারের ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকান খোলননি। তবে, গতকাল থেকে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছেন। তবে, ওসি মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে যে মামলা করা হয়েছে তাতে নবম শ্রেণীর ছাত্র, কৃষক, কুমিল্লায় বসবাসরত ব্যক্তিসহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এ রকম বহু মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে এখনও গোয়ালাবাজারের আশপাশের গ্রামের পুরুষরা বাড়ি ফিরেননি। কেবল রোগী ও মহিলারা বাড়িতে বসবাস করছেন। হত্যা মামলায় ১০০ জনসহ ৮০০ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার দিন পুলিশ গোয়ালাবাজার থেকে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে অনেক লোককে আটক করে। পরে যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দিলেও গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র রিপন মিয়া, উমরপুর ইউপির বড় ইসবপুর গ্রামের রঙমিস্ত্রি তোফায়েল, একই গ্রামের লিটন মিয়া, গোয়ালাবাজারের জেনারেটর অপারেটর প্রদীপ দেব, লামা গাভুরটিকি গ্রামের মিলন মিয়া, মাদারবাজারের ব্যবসায়ী শিব্বির আহমদকে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। একই সঙ্গে মামলায় আসামি করা হয়েছে পাশের বালাগঞ্জ থানার নশিওরপুর গ্রামের কৃষক কওছর মিয়া ও কুমিল্লায় বসবাসরত তার ভাই শ্রমিক শাহাদতকে। এ ছাড়া অনেক নিরপরাধ মানুষকে মামলার আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মামলায় নিজ করনসী ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে। সংঘর্ষে দু’টি পক্ষ থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও পার্শ্ববর্তী জায়পুর গ্রামের মানবজমিন প্রতিনিধি জয়নাল আবেদিনকে হুকুমদায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অপরপক্ষকে আসামি করা হলেও নাম রাখা হয়েছে শেষ দিকে। এ সব কারণে এজাহার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনি বলেন, নিরপরাধ মানুষকে যাতে হয়রানি করা না হয় সেজন্য পুলিশকে বলেছি এবং আবারও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। তাৎক্ষণিক মামলার এজাহার তৈরি করায় এমন ভুল হতে পারে বলেও জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার ওসি (তদন্ত) অকিল উদ্দিন আহমদ। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদেরই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে শুক্রবার রাতে এজাহারভুক্ত আরও দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত ৪ দিনে মোট ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চার দিন ধরে ৫-৬টি গ্রাম রয়েছে পুরুষশূন্য। বালাগঞ্জের নশিওরপুর গ্রামের কুমিল্লায় বসবাসরত শাহাদত সাংবাদিকদের বলেন, আমি তিন মাস ধরে কুমিল্লায় কাজ করছি। কিন্তু আমাকে নাকি মামলায় আসামি করা হয়েছে। স্কুলছাত্র রিপনের মা আমিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে খরচ করার জন্য বাজারে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। বড় ইসবপুর গ্রামের রুহুল মিয়া বলেন, আমার ছোট ভাই তোফায়েল বাজারে রঙ কিনতে গেলে হাজির মার্কেট এলাকা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। উছমানপুর ইউপির মেম্বার জুবায়ের আহমদ লিটন বলেন, ব্যবসায়ী শিব্বির দোকানের মালামাল কিনতে গোয়ালাবাজারে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশনুজ্জামান জানিয়েছেন, কোন অবস্থাতেই নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হবে না। নিরপরাধ কেউ যদি এজাহারভুক্ত হয়ে থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়া হবে। এদিকে, গতকাল দুপুরে ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনায় স্থানীয় জাতীয় পার্টির উদ্যোগে থানা পার্শ্ববর্তী তালতলা জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি ছিলেন সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া।

No comments

Powered by Blogger.