ধর্ষিতার জরিমানা!

শ্রীনগরে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ মীমাংসায় এক ধর্ষিতাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল বেলা এগারটার দিকে উপজেলার রাঢ়িখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সালিশ মীমাংসায় ধর্ষককে একলাখ টাকা ও ধর্ষিতাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয়রা জানায়, রাঢ়িখাল ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার গ্রাম্য ডাক্তার ও দুই সন্তানের জনক মফিজুল গত ৪ঠা ডিসেম্বর রাত দশটার দিকে ওই এলাকার এক গৃহবধূকে ফাঁদে ফেলে বালাসুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। এসময় ধর্ষিতার চিৎকারে স্থানীয় দুই যুবক তাকে উদ্ধার করে। এসময়  মফিজুল দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে ধর্ষিতাকে তার বাবার জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়। ধর্ষিতার বাবা নতুন বাজার এলাকার গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র ভ্যানচালক। ঐদিনই স্থানীয় সালিশদারদের পরামর্শে বিষয়টি ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদকে জানান। চেয়ারম্যান ঘটনাটি বিচার সালিশ করে মীমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে গত ৯ই ডিসেম্বর চেয়ারম্যান স্থানীয় সালিশদারদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ মীমাংসায় বসেন। সালিশদাররা ঘটনার সত্যতা পেয়েও টাকা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ঐদিন কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে উঠে যান। এর পর ভাগ্যকুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ সরদারের আত্মীয় হওয়ায় তার প্রভাবে মফিজুল সালিশ মীমাংসায় বসতে টালবাহানা শুরু করে বলে স্থানীয়রা জানায়। পরে গতকাল চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ, রাঢ়িখাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসু মোল্লা, ইউপি সদস্য আঃ
 রব মেম্বার, আঃ আউয়াল, কালাম, নাজমা বেগম, সালিশদার হানিফ শেখ, জালাল শিকদার ও আরো কয়েকজন মিলে ধর্ষক মফিজুলকে নতুন বাজার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে একলাখ টাকা জরিমানা করেন। অন্যদিকে ধর্ষিতারও দোষ রয়েছে উল্লেখ করে তাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ধর্ষিতার বাবা জানায়, একদিকে তার মেয়ের সংসার ভেঙে যাচ্ছে অপর দিকে জরিমানার টাকা দিতে হবে জেনে তিনি অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। তাছাড়া, মেয়ের কি দোষ তা তিনি বুঝতে পারছেন না। ধর্ষিতা ঐ নারী জানান, মফিজুল তার স্বামীর আত্মীয়। মফিজুলের কাছে চিকিৎসার জন্য গেলে সে চিকিৎসার কথা বলে তার মোবাইল ফোনে গোপনীয় দৃশ্য ধারণ করে। পরে ঐ রেকর্ড তার স্বামীকে জানিয়ে দেয়া হবে বলে ফাঁদ পেতে ঐ গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। এব্যাপারে সালিশদার রাঢ়িখাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসু মোল্লা বলেন, মফিজুল প্রকৃত অর্থে খারাপ। ইতিপূর্বে ফাঁদ পেতে আরো তিনটি সংসার নষ্ট করেছে। এবার তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে ঐ এলাকা থেকে দোকান ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। ধর্ষিতা বিষয়টি তার স্বামীকে না জানানোর কারণে তাকেও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান সকলের উপস্থিতিতে এ রায় দেন বলে তিনি জানান। এসময় ইউপি সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর- রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠো ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.