কিবরিয়া হত্যায় বিএনপি নেতা হারিছ, আরিফ গউছসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সম্পুরক চার্জশীট by এম এ মজিদ

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহএএমএস কিবরিয়া হত্যাকান্ডের ৯ বছর পর বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফায় সম্পুরক চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। প্রথম চার্জশীটে ১০জন দ্বিতীয় সম্পুরক চার্জশীটে ২৪ জন এবং তৃতীয় দফা সম্পুরক চার্জশীটে আরও ৯ জনকে জড়িয়ে মোট ৩৩ জনকে আসামী করে বৃহস্পতিবার অতি গোপনে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল এ চার্জশীট দাখিল করেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে কিবরিয়া হত্যা মামলায় আরও ২ জনকে চার্জশীটভূক্ত করা হয়, তবে তারা ইতিমধ্যে ভারতে মারা যাওয়ায় তৃতীয় দফা সিএস এ তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন চার্জশীটে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সেক্রেটারী ও পৌর মেয়র আলহাজ্জ জিকে গউছকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
নতুন চার্জশীটে সম্পৃক্ত অন্য ৬ জন হলেন- হাফেজ মো. ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে করিম, দেলোয়ার হোসেন রিপন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল ও মওলানা শেখ আবদুস সালাম। নতুন চার্জশীটভূক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে কিবরিয়া হত্যা মামলায় কার কি ভূমিকা ছিল তা জানা যায়নি।
তবে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্জ জিকে গউছ জানিয়েছেন- সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যাকান্ডের সময় তিনি পবিত্র ওমরা হজ্জ পালনের জন্য সৌদী আরবে ছিলেন। এমন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির হত্যাকান্ডের সাথে তাকে সম্পৃক্ত করার অর্থ হল তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নষ্ট করা।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া, তার ভাতিজা মঞ্জুরুল কিবরিয়াসহ ৫জন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সেক্রেটারী ও এমপি আব্দুল মজিদ খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দেড় মাসের মাথায় একই বছরের ১৯ মার্চ তৎকালীন সদর থানার ওসি ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এস. জামান, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান জেলা বিএনপি সাবেক সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ূমসহ ১০ জন অখ্যাত বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন।
প্রতিবেদন দাখিলের দিনই আদালতে নারাজী পিটিশন দাখিল করেন মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর একই বছরের ১০ মে মামলার শুনানীর তারিখ ধার্য হয়। কিন্তু মামলার বাদীর নারাজীর পিটিশন বাতিল হলে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট এই আবেদনের পরিপ্রেেিত মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন।
সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল মুন্সি আতিকের দাখিলকৃত চার্জশীট থেকেই বিচার কাজ শুরু করতে চাইলে মামলার বাদী বর্ধিত ও অধিকতর তদন্তের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক বিপ্লব গোস্বামী সেই আবেদনও খারিজ করে দেন। আবেদনটি খারিজ হলে মামলার বাদী হাইকোর্টে রিভিশন লিভ টু আপিল দায়ের করেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাইকোর্ট দীর্ঘ শুনানী শেষে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
সিআইডি’র এএসপি মোঃ রফিকুল ইসলামকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। বর্ধিত তদন্তকালে মামলাটি নতুন মোড় নেয়। এর সঙ্গে জঙ্গী মিজান ও মুফতি হান্নানসহ জঙ্গী চক্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। মুন্সি আতিকের দেওয়া অভিযুক্ত ১০ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না যাওয়ায় প্রায় সাড়ে ৩ বছর পর ১০ আসামী জামিনে মুক্ত হন।
২০১১ সালের ২০ জুন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামী করে অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্তারী কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি রফিকুল ইসলাম ৪ বছর অধিকতর তদন্ত শেষে হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল বিচারিক আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া প্রতিবেদনের উপর হবিগঞ্জের বিচারিক আদালতে নারাজীর আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেেিত মামলার মুল নথি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে থাকায় বিচারক রাজিব কুমার বিশ্বাস উপ-নথির মাধ্যমে আবেদনটি সিলেটে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কিবরিয়া হত্যাকান্ডের অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন এর বিরুদ্ধে নারাজীর আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ। তিনি ওইদিনই সিআইডির সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
পরে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা অধিকতর তদন্ত শুরু করার ২ বছর ১১ মাসের মাথায় তৃতীয় দফা সম্পুরক চার্জশীট প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী পরে আইনজীবী এডভোকেট আলমগীর ভূইয়া বাবুল জানান- পুরো চার্জশীট দেখিনি। তাই মন্তব্য করা বেশ কঠিন। প্রসঙ্গত, মরহুম শাহ এ এম এস কিবরিয়া ১৯৩১ সালে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.