বুশের বিচারের সম্ভাবনা খুবই কম

জর্জ ডব্লিউ বুশ
মার্কিন সিনেটের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির প্রতিবেদনে সিআইএর নৃশংস জিজ্ঞাসাবাদ কৌশলের তথ্য প্রকাশের পর দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি উঠেছে। তবে তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নির্যাতনের বিষয়টি অনুমোদন করলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম। তাঁর সময়কার জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরও হয়তো বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। খবর আল-জাজিরার। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল-হুসেইন বলেন, ‘অন্যায়কারীরা শুধু রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার কারণে পার পেয়ে যেতে পারে না।’ প্রায় একই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে অন্যান্য মানবাধিকার বিশ্লেষক, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকেও। নৃশংস জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতির জন্য বুশ বা তাঁর আমলের কর্মকর্তাদের সরাসরি বিচারের আওতায় আনতে পারে মার্কিন বিচার বিভাগ। কিন্তু সেই বিচার বিভাগের কর্মকর্তারাই বলছেন, বন্দীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের ঘটনা নিয়ে তাঁরা ২০০০ সাল থেকে দুটি তদন্ত চালিয়েছেন। কিন্তু সেই তদন্তে বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার মতো কোনো তথ্য-প্রমাণ পাননি। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত সিনেট কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন কোনো নতুন তথ্য পাওয়া যায়নি যে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জিজ্ঞাসাবাদের ওই বিতর্কিত কৌশল প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অতীতের ওই কৌশলগুলো বাদ দেওয়া প্রয়োজন।
 ওবামাও ইঙ্গিত দেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে না। কিন্তু বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছেন। আর মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, তখনকার প্রেসিডেন্ট বুশ, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রেই বাস করছেন, তাই বিচার প্রক্রিয়া মার্কিন আদালতে করাই ভালো হবে। কারণ তথ্য-প্রমাণের বিষয়গুলো মার্কিন কর্মকর্তাদেরই কাছ থেকে চাওয়া হবে। সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটির আইনজীবী ক্যাথি রবার্টস বলেন, ‘সিনেট কমিটির প্রতিবেদনে প্রচুর নতুন তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। বিচার বিভাগের উচিত প্রতিবেদনটির দিকে আবার নজর দেওয়া। রাজনৈতিক চাপে বিচার বিভাগের প্রভাবিত হওয়া উচিত হবে না।’ মার্কিন আদালত এই বিচার করতে অনিচ্ছুক বা ব্যর্থ হলে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বিচারের পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ না হলে আইসিসি সে বিচার করবে না। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার বিকল্প পথ রয়েছে। আইসিসি মার্কিন বন্দিশিবিরে আফগান বন্দীদের নির্যাতনের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছিল। আফগানিস্তান আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র। সে ক্ষেত্রে একটি মামলাও হতে পারে। সিনেটের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির প্রতিবেদনে ১১৯ জন বন্দীকে নির্যাতন করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এই নির্যাতন যুদ্ধাপরাধ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এইচআরডব্লিউয়ের আইনজীবী রিচার্ড ডিকার বলেন, কথিত নির্যাতনের শিকার বন্দীর সংখ্যা হয়তো আইসিসির মতো বড় আদালতে বিচারের জন্য যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া সংগঠকটির গবেষক রিড ব্রোডি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আইসিসি প্রতিষ্ঠার সময় মিত্রদের সঙ্গে চুক্তি করে নিয়েছিল মার্কিন কোনো নাগরিককে এর কাঠগড়ায় তোলা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.